কখনও কখনও সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে। একসঙ্গে আট–ন’টা ফ্লাইট। বসার জায়গা নেই। প্রায় ১২০০ যাত্রী থিকথিক করছেন। বাথরুম পরিষ্কার রাখতে হিমসিম অবস্থা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। এই অসহ পরিস্থিতি সামাল দিতে চলতি বছরের মার্চে বাগডোগরা বিমানবন্দরের সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়ার পরিধি কিছুটা বাড়ানো হলেও তা সাময়িক ভাবে স্বস্তি দিয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ‘ডিজি–যাত্রা’ চালু হয়েছে। বিমানবন্দরে ঢুকতে ও চেক–ইন কাউন্টারে লম্বা লাইনের যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে। তবে, সেটাও সাময়িক।
কারণ, বাগডোগরা থেকে উড়ান বাড়াতে মুখিয়ে রয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এই মুহূর্তে প্রতিদিন সেখান থেকে গড়ে ৩০–৩২টি উড়ান নামছে। একই সংখ্যক উড়ান ডানা মেলছে বাগডোগরা থেকে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সের এক কর্তার কথায়, ‘উড়ানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। সারা বছরই কম–বেশি ফুল ফ্লাইট।’ শুধু তো কলকাতা নয়, দিল্লি–মুম্বই–বেঙ্গালুরু–হায়দরাবাদের সরাসরি উড়ান চলছে এখন। চলছে পারো–ব্যাঙ্ককের ইন্টারন্যশনাল ফ্লাইটও। ক্রমাগত বাড়ছে উড়ান। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যাত্রী। ২০২৩–২৪ সালে ৩১ লক্ষ যাত্রী বাগডোগরা দিয়ে যাতায়াত করেছেন। আশঙ্কা, ২০২৪–২৫ সালে তা বেড়ে প্রায় ৩৭ লক্ষ হতে পারে।
এতে তো খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু, যত যাত্রী বাড়ছে ততই টেনশন বাড়ছে। এত যাত্রী ধারণের জায়গা কোথায়? বর্তমান টার্মিনালের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বছরে ২৫ লক্ষ। তা ছাড়িয়ে গিয়েছে বছর তিনেক আগেই। এমত অবস্থায় নতুন টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে বছরে এক কোটি যাত্রী ধারণ ক্ষমতার নতুন টার্মিনালের। তবে তা চালু হতে কমপক্ষে ৩০ মাস লাগবে। আর এই আড়াই বছরে আরও কত উড়ান বাড়বে, আরও কত যাত্রী বাড়বে, তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এক কর্তার কথায়, ‘এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়ায় ৩৫০ স্কোয়ার মিটার এলাকা বাড়ানো হয়েছে। তা দিয়েই আগামী দিন সামাল দিতে হবে। আর বাড়ানোর মতো জায়গাও অবশিষ্ট নেই।’
নতুন টার্মিনালের স্থপতির দায়িত্বে রয়েছেন দিখসু কুকরেজা। তাঁর কথায়, ‘হিমালয়, তার কোলে বেড়ে ওঠা চা–বাগান ও উত্তরবঙ্গের সৌন্দর্য্য দিয়ে সাজানো হবে নতুন টার্মিনালকে। কাঞ্চনজঙ্ঘার ব্যাকড্রপে উত্তরবঙ্গের গেটওয়ের এই বিমানবন্দরকে খুব যত্ন নিয়ে আমরা সাজাচ্ছি।’ ১০৫ একর জমির উপরে ১৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ৭০ হাজার স্কোয়ার মিটার টার্মিনাল দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় তিন হাজার যাত্রী অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন। সারা বছরে এক কোটি যাত্রী ধারণের ক্ষমতা থাকবে তার। প্রতি ঘণ্টায় যাতে ১২টি উড়ান ওঠানামা করতে পারে, তারও পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন মাত্র পাঁচটি পার্কিং বে রয়েছে। তার জায়গায় ১৬টি পার্কিং বে তৈরি হচ্ছে। থাকছে ছ’টি এরোব্রিজও। আগে বাগডোগরায় কখনও এরোব্রিজ ছিল না।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘নতুন টার্মিনালের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। উত্তরের পর্যটকদের জন্য তা খুবই জরুরি। এখন অনেক মানুষ ফ্লাইটে আসছেন। তবে, টিকিটের দামও খুব। যেহেতু টিকিটের চাহিদা রয়েছে, তাই এয়ারলাইন্সগুলো টিকিটের দামও বাড়িয়ে চলেছে। আর সেই কারণেই তো বাগডোগরা থেকে উড়ান বাড়াতে তাদের এত উৎসাহ।’ নিয়মিত বাগডোগরায় যাতায়াত করেন অভিজিৎ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘ডিজি যাত্রা চালু হওয়ার পরে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সকলে সচেষ্ট। একটু আগে নতুন টার্মিনালের পরিকল্পনা করলে আরও ভালো হতো।’
তবে, শুধু তো ভিড় নয়, আরও একটা সমস্যা নিয়ে জর্জরিত বাগডোগরা। তা ওয়েদার। শীতকালের শুরু ও শেষের দিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় বিমানবন্দর। সোমবারেই সকাল থেকে উড়ান ওঠানামা করতে পারেনি। পূর্ব ও পশ্চিমে বিস্তৃত রানওয়ের পশ্চিম প্রান্তে ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) রয়েছে। বাগডোগরায় ক্যাটিগরি–২ আইএলএস ব্যবহার করা হয়। সেখানে দৃশ্যমানতা ৫০০ মিটারের নীচে নেমে গেলে আর উড়ান ওঠানামা করতে পারে না। এর থেকে আধুনিক ক্যাটিগরি–৩ থাকলেও, আগামী দিনে তা ব্যবহার করা হবে কি না, সেটা পুরোপুরি বায়ুসেনার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে। কারণ, বাগডোগরা বিমানবন্দর আদতে বায়ুসেনারই অধীনে। কমার্শিয়াল ফ্লাইট ওঠানামা করার অনুমতি দিয়েছে তারা। সেখানকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)–ও তাই বায়ুসেনারই অধীনে।