রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ নতুন নয়। অভিযোগ, নবান্ন–সহ রাজ্যের বিভিন্ন সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়ের কর্মীরা বরাবরই বাড়তি সুযোগ–সুবিধে পেয়ে আসছেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তাঁরাই বিশেষ অগ্রাধিকার পান। এই অভিযোগ মেটাতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত হয়েছে হাইপাওয়ার্ড কমিটি। কী ভাবে বৈষম্য দূর হবে, তার খসড়া তৈরি করতে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসছেন কমিটির সদস্যরা।
সরকারি সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যান করে এই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কো–চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ ছাড়াও অর্থ এবং পার্সোনেল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত সচিব, পূর্ত দপ্তরের যুগ্ম সচিব এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এক যুগ্ম অধিকর্তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, ডিএ ইস্যুতে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও ক্ষোভ–বিক্ষোভ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলায় ডিএ জট কবে কাটবে, তা অনিশ্চিত। এই অবস্থায় সরকারি কর্মীদের মধ্যে প্রোমোশনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে চাইছে সরকার।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘রাজ্য প্রশাসন চলে থ্রি–টিয়ার সিস্টেমে। সবার উপরে সেক্রেটারিয়েট। তার পরের ধাপে রয়েছে ডিরেক্টরেট এবং রিজিওনাল অফিস। সবথেকে বেশি সুযোগ–সুবিধা পান সেক্রেটারিয়েটের কর্মীরা। প্রশাসনিক মহলে তাঁরা কুলীন স্টাফের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। সেক্রেটারিয়েট বিভাগের স্টাফদের পদোন্নতির সুযোগ অনেক বেশি।
এখানেই এলডি (লোয়ার ডিভিশন) ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করার পর একজন প্রোমোশন পেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি, এমনকী স্পেশ্যাল সেক্রেটারি পর্যন্ত হতে পারেন। কিন্তু ডিরেক্টরেট এবং রিজিওনাল অফিসের ক্ষেত্রে বড় জোর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার পর্যন্ত হাওয়া যায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স থাকা সত্ত্বেও ডিরেক্টরেট ও রিজিওনাল অফিসের কর্মীরা কেন প্রোমোশনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন, সে প্রশ্ন বহুদিনের। এ নিয়ে একাধিকবার নবান্নে স্মারকলিপিও জমা পড়েছে।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনেরর প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘সেক্রেটারিয়েট এবং ডিরেক্টরেট ও রিজিওনাল অফিসের কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। সরকারি দেরিতে হলেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করায় আমরা খুশি।’