শাল, মহুলের বনে ফের বাঘ! ভয়ে কাঁটা জঙ্গলমহল, ৬ বছর আগের স্মৃতি আজও টাটকা
এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
আবারও বাঘের আতঙ্ক ঝাড়খণ্ড সীমানায় থাকা ঝাড়গ্রাম জেলায়। জানা গিয়েছে, সোমবার ওডিশার সিমলিপাল থেকে গুরবান্দা হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চাকুলিয়া ব্লকের রাজাবাসা জঙ্গলে পৌঁছয় একটি বাঘ। গ্রামবাসীদের গবাদি পশুদের জঙ্গলে চরাতে নিয়ে যেতে নিষেধ করেছে চাকুলিয়ার বনদপ্তর। এ রাজ্যের জামবনি ও বেলপাহাড়ি সীমানায় কড়া নজরদারি রেখেছে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের ডিএফও।
কোনও কোনও মহল এটিকে তিন বছর বয়সী বাঘিনী 'জিনাত' বলেও মনে করছে। জিনাতের সঙ্গে যমুনা নামে আরও একটি তিন বছরের বাঘিনীকে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের তাডোবা টাইগার রিজার্ভ থেকে ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমিলিপাল টাইগার রিজার্ভে ছাড়া হয়েছে। তাদের একটিকেই কি দেখা গিয়েছে জঙ্গলমহলে?
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমামকে ‘এই সময় অনলাইন’-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জিনাতের বিষয় নিয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। কিন্তু এই খবর সামনে আসতেই ভয় উঁকি দিচ্ছে শাল,মহুলের জঙ্গলে। মনে পড়ছে ৬ বছর আগের সেই দিনগুলির কথা।
২০১৮ সালের ২ মার্চ জঙ্গলমহলে বনদপ্তরের ক্যামেরায় প্রথম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব প্রমাণ হয়। তার আগে যদিও কেউ কেউ গল্পকথার মতো বাঘ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছিলেন। কোথাও আধ খাওয়া বুনো জন্তুর দেহাংশ মিলে ছিল। প্রথমে বন দপ্তরের কর্তারাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। কিন্তু পরে ট্র্যাপ ক্যামেরায় বিশাল এক বাঘের ছবি ধরা পড়তেই চমকে ওঠেন সকলে। জঙ্গলে ঢুকে বাঘের হানায় জখম হন বেশ কয়েকজন। বাঘের উপর নজরদারি চালাতে গিয়ে বন দপ্তরের গাড়িতে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুও হয় দুই কর্মীর। পরে সে বছররেই ১৩ এপ্রিল মেদিনীপুর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে বাগঘরার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। চোরাশিকারীরা জঙ্গলে ঢুকে মেরে ফেলেছিল বাঘটিকে। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে মেদিনীপুর ডিভিশনের জঙ্গলে বাঘটি ছিল। কোথা থেকে সেই বাঘ এসেছিল তা আজও রহস্য।
কিন্তু এই তিন মাস ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জঙ্গলে এবং জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল বাঘটি। স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছিল কিছু ক্ষেত্রে।
স্বাভাবিকভাবে ফের বাঘ বেরনোর খবর চাউর হতেই আতঙ্ক বেড়েছে। দুই জেলার সাধারণ মানুষেরও অজানা নয়, ওই পথে জঙ্গল হয়ে বাঘ আসা একে বারেই অসম্ভব কিছু নয়। তাই বাঘের আতঙ্ক হালকা ভাবে নিতে নারাজ ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের অন্তর্গত গিধনি ও চাকুলিয়া রেঞ্জে বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় কড়া নজরদারি রাখছে বনদপ্তর।
বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বাঘটিকে দেখা গিয়েছে। যার সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় অনলাইন। প্রাথমিকভাবে সেই ভিডিয়ো ভুয়ো বলেই মনে করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বলেন, ‘বাঘের বিষয়টি সামনে আসার পর আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে দেখছি। জামবনি, গিধনি ও বেলপাহাড়ি রেঞ্জের ঝাড়খণ্ড সীমানাগুলিতে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।’