• বুড়ো ‘বেবি সিভক’কে ট্র্যাকে ফেরালেন ইঞ্জিনিয়াররা
    এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: বয়স ১৪৩ বছর। ‘হাঁটাচলার’ শক্তি হারিয়েছিল অনেক দিন আগেই। প্রায় ৭৯ বছর রোদ–ঝড়–বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। অবশেষে ন্যারোগেজে চাকা গড়াল জরাজীর্ণ সেই বেবি সিভকের। বৃদ্ধ সেই ‘বেবি সিভক’–এর প্রাণ ফেরালেন টিম ডিএইচআর (দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে)–এর ইঞ্জিনিয়াররা। অনেক কসরত করে তাকে ট্র্যাকে ফেরালেন তাঁরা।

    গত শনিবার যাত্রী নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে রেলওয়ে ট্র্যাকে দৌড়ে বেড়িয়েছে সে। তাকে দেখে কে বলবে, পুরোনো স্টিম লোকো ইঞ্জিন–এর মধ্যে সে অন্যতম। দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও শিশু যেন সবে হাঁটতে শিখে এখন দৌড়চ্ছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে দৌড় শুরু হলেও এখনও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা বাকি সিভকের। তারই কাজ জোরকদমে চলছে তিনধারিয়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপে।

    উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার চেতন কুমার শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, ‘আমাদের টেকনিক্যাল টিম তাঁদের যোগ্যতা আরও একবার প্রমাণ করেছে। বেবি সিভককে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

    ১৮৮১–তে বিদেশের মাটিতে প্রথম আত্মপ্রকাশ হয় বেবি সিভকের। ১৯১৩–য় জার্মানির ঠিকাদার অরেনস্টেইন এবং কোপেনের হাত ধরে নতুন চেহারা নিয়ে ব্রিটিশ–শাসিত ভারতে প্রথম ন্যারোগেজে আত্মপ্রকাশ করে স্টিম লোকোমোটিভ বেবি সিভক। অন্যান্য স্টিম ইঞ্জিনের তুলনায় অনেকটাই ছোট এই ইঞ্জিন। সেই সময়ে মূলত সেবক ভ্যালি এবং কিষাণগঞ্জে রেলের কাজের জন্যে ইঞ্জিনটি ব্যবহার করা হতো।

    ডিএইচআরের বি ক্লাসের কামরা নিয়ে তখন ন্যারোগেজে দাপিয়ে বেড়াত। ১৯৪৫–এ পুনর্নবীকরণের জন্যে তিনধারিয়া রেল ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়েছিল তাকে। ১৯৫৩–য় দিল্লিতে ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ় সেন্টেনারি এগজ়িবিশন সেন্টারেও নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ১৯৫৭–য় সোজা শিলিগুড়ি জংশনে।

    তারপর থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত শিলিগুড়ি জংশনের বাইরেই ঠায় দাঁড়িয়েছিল বেবি সিভক। তবে এখানেই শেষ নয়। ২০০০–এ লরিতে তুলে ইঞ্জিনটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘুমে। সেখানেই এতদিন মিউজ়িয়ামের বাইরে মডেল হিসেবে রাখা ছিল সিভক। পর্যটকেরা তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলত।

    কিন্তু কেউ ভাবেনি যে ৭৯ বছর পরে ন্যারোগেজ লাইনে সেই সিভকই ছুটে বেড়াবে। সম্প্রতি তুইনড়িয়া অফিসে চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন অজয় নন্দন। তিনি ঘুম স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে বেবি সিভককে মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এরপরেই তিনি তার ‘প্রাণ’ ফেরাতে নির্দেশ দেন আধিকারিকদের।

    সেইমতো ঘুম থেকে লরিতে তুলে বেবি সিভককে তিনধারিয়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপে নিয়ে আসা হয়। ওয়ার্কশপে নিয়ে এসে বেবি সিভকের সমস্ত যন্ত্রপাতি খোলা হয়। দেখা যায়, বেশ কিছু যন্ত্রপাতি একেবারেই খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবে বার্নার ভালোই ছিল। ওয়ার্কশপেই সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। মাত্র এক মাসের মধ্যে বেবি সিভকের প্রাণ ফেরান ওয়ার্কশপের কর্মীরা। তিন দিন আগে রেলের পদস্থ কর্তারা ওয়ার্কশপের ভেতরেই তাকে রেলট্র্যাকে তোলেন। রেলকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যটকদের জন্যে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেবি সিভককে ঘোরানো হবে।
  • Link to this news (এই সময়)