আবাস ‘শূন্য’ কুসুম্বার ৩টি গ্রাম, ফের সার্ভের নির্দেশ
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: রামপুরহাট-১ ব্লকের কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে তিনটি গ্রাম আবাস শূন্য। গ্রামগুলির একটি পরিবারেরও নাম নেই তালিকায়। তাই নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা। কপালের দোষ, নাকি প্রশাসনিক ভুলে এমনটা হয়েছে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না আবেদনকারী দুঃস্থ মানুষগুলি। তাই পুনরায় সার্ভের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনিক কর্তারা। আবাস যোজনার তালিকা ঘিরে ব্লক অফিসগুলিতে বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের শর্তে নয়, আবাস যোজনায় বাড়ির জন্য আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রে ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি’ থাকতে হবে। নবান্নের তরফে জারিও হয় নির্দেশিকা। সেখানে বলা হয়েছে, বাদ যাওয়া নামগুলি পুনর্বিবেচনার জন্য তথ্য যাচাই করতে হবে। কিন্তু তার মধ্যেও অভিযোগের শেষ নেই। শাসকদলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঘুরপথে আবাসের ঘর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম রাখতে সমীক্ষা চলাকালীন পাকা বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ীভাবে মাটির ঘরে বাস করারও অভিযোগ পর্যন্ত সামনে এসেছে। নানাবিধ ফন্দিফিকির করে সরকারি আবাসের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগের মধ্যে ‘অন্য ছবি’ দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর জন্মস্থান কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই অঞ্চলের তিলডাঙা, আদলপাহাড়ি ও বলরামপুর গ্রামের একজন বাসিন্দারও নাম নেই আবাসের তালিকায়। স্বভাবতই ক্ষোভে ফুসঁছেন বঞ্চিত গ্রামের মানুষেরা।
তিলডাঙা গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সোনামুনি মার্ডি, সুচিত্রা হেমব্রমরা আক্ষেপের সুরে বলেন, আমাদের কারও ভাগ্যে জোটেনি পাকা বাড়ি। ব্লক প্রশাসনের লোকেরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী-তে জানাতে বলেন। সেখানেও জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তালিকায় নাম ওঠেনি। অথচ আশপাশের গ্রামের অনেকের পাকা বাড়ি, অবস্থাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও তালিকায় নাম রয়েছে। আমাদের কপালের দোষ, নাকি প্রশাসনিক ভুল অথবা গাফিলতির কারণে এটা হয়েছে বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের লোক এসে দেখে যান আমরা পাকা না মাটির বাড়িতে বসবাস করছি। একইভাবে গ্রামের একটিও পরিবারের নাম আবাসের তালিকায় না থাকায় হতাশ আদলপাহাড়ি ও বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দারা। অথচ গ্রামের অনেকেই মাটির খড়ের চালা ও জীর্ণ বাড়িতে বসবাস করছে। ক্ষোভের সুরে তাঁরা বলেন, ‘দিদি’ বলেছেন সকল যোগ্যরাই সরকারি বাড়ি পাবেন, তাহলে কেন এমনটা হল? গ্রামের একজনও কী নেই যোগ্য? তাহলে প্রশাসন আমাদের আবাস প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার অযোগ্য হিসাবে ঘোষণা করুক।
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল বলেন, তৃণমূল কর্মী বা তাঁদের নেতাদের নাম অবশ্যই আবাসের তালিকায় রয়েছে। আগে সুবিধা পেলেও তাঁদের ফের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ এই প্রকল্পে যাঁদের প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল, সেই এসসি, এসটি অধ্যুষিত গ্রামগুলি বঞ্চিত হয়েছে। যে তিনটি গ্রাম আবাস শূন্য, সেই গ্রামগুলির অধিকাংশ মানুষই সরকারি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। এখন বলা হচ্ছে নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে তাঁদের নাম ওঠেনি।
এব্যাপারে তৃণমূল পরিচালিত কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তোতা শেখ বলেন, তিলডাঙা, আদলপাহাড়ি ও বলরামপুর মিলিয়ে প্রায় চারশো জন আবাস প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে অন্ততপক্ষে ১৫০ জন বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। নাম না থাকায় তাঁরা পঞ্চায়েতে আসছেন। আমরাও প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েছি। ওই তিনটি গ্রামে পুনরায় সার্ভের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের এই পদক্ষেপে পাকা বাড়ির আশায় বুক বাঁধছেন গ্রামবাসীরা। এদিকে এদিন আবাসে ব্যাপক বেনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করে নলহাটি ১ ব্লক অফিসে ডেপুটেশন দেয় বিজেপি।