সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: বাজার থেকে আট টাকায় ডিম কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকারের তরফ থেকে ডিমের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ছ’টাকা। মিড ডে মিলে পড়ুয়াদের ডিম দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাঁদের এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মিড ডে মিল সহ ডিমের জন্য টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ওয়েস্টবেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার ইউনিয়ন পুরুলিয়া জেলা কমিটি আন্দোলনে নেমেছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি অনিতা মাহাত বলেন, বর্তমানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রচুর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঠিকমতো বিল দেওয়া হয় না। দু’-তিন মাস পর বিল পাওয়া যায়। সরকার থেকে কোনও মোবাইল দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের বিভিন্ন কাজ অনলাইনে করতে হয়। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে নতুন বাসনপত্র দেওয়া হয়নি। আমরা লাগাতার আন্দোলন করে চলেছি।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে প্রসূতি ও শিশুদের মিড ডে মিল দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ডিম দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারের বরাদ্দ টাকার চেয়ে ডিমের দাম বেশি হাওয়ায় কর্মীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়ছেন। ঠিকমতো ডিম দিতে না পারায় অভিভাবকেরা প্রায়ই বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ঝামেলা করছেন।
বর্তমানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছ’দিন মিড ডে মিল দেওয়া হয়। তিনদিন খিচুড়ি ও ডিম দেওয়া হয়। বাকি তিনদিন ভাত, আলু-সব্জি ও ডিমসেদ্ধ দেওয়া হয়। গর্ভবতী ও প্রসূতি মহিলাদের ছ’দিন গোটা ডিম দিতে হয়। বাচ্চাদের তিনদিন অর্ধেক এবং তিনদিন গোটা ডিম দেওয়া হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমানে ডিমের জন্য সাড়ে ছ’টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে ডিম কিনতে গেলে আট টাকা দাম পড়ছে। শুধু তাই নয়, বাচ্চা প্রতি সব্জির জন্য মাত্র ১১ পয়সা দেওয়া হয়। আবার যেদিন ভাত দেওয়া হয় সেই দিন বাচ্চাদের জন্য কোনও সব্জি বরাদ্দ থাকে না। জ্বালানি বাবদ ৩০জন পর্যন্ত থাকলে ১৮ টাকা, ৩১-৫০ জন থাকলে ১৯টাকা, ১৫০ জন থাকলে ২৩ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। সেই টাকাতেই কেরোসিন, হলুদ কিনতে হয়। সরকারের তরফ থেকে শুধুমাত্র চাল, ডাল এবং রান্নার তেল দেওয়া হয়। গত ১৫ বছর ধরে জ্বালানির জন্য এক টাকাও বাড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ।
এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, দাম বাড়ায় প্রতিদিন ডিম দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি দপ্তরকে জানানোর পর বলা হয়েছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ম্যানেজ করে চালিয়ে নিতে হবে। তাই আপাতত আমরা বাচ্চাদের প্রতিদিন অর্ধেক ডিম, কোনও কোনও সেন্টারে শনিবার ডিম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেবিষয়ে প্রতিটি গ্রামে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আর এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ইতু মণ্ডল বলেন, আমরা অসুবিধার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি।
সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ চৈতালি রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে যাব।