নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার সায়ক দাসের হস্তক্ষেপে রাজস্থানে বিক্রি হওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে গলসির ওই কিশোরীকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সে গোপনে বাড়িতে ফোন করে জানায়, রাজস্থানের যোধপুরের কাছে তাকে এক জায়গায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে উদ্ধারের জন্য তার বাবা-মা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেন। তাতে তেমন লাভ হয়নি। পরে বিষয়টি পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপারের কানে পৌঁছয়। তিনি পুলিসের একটি টিম তৈরি করে রাজস্থানে পাঠান। সোমবার কিশোরীকে রাজস্থান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। পুলিস সুপার বলেন, এই ঘটনায় কে বা কারা যুক্ত রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওই নাবালিকা পুলিসকে জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে তাকে ভুল বুঝিয়ে গলসি থেকে বর্ধমানে নিয়ে আসে। এখানে একটি হোটেলে তাকে রাখা হয়। পরে তাকে আসানসোলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাজস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সে জানায়, রাজস্থানের ওই পরিবারের লোকজন বারবার দাবি করতে থাকে, তাকে তারা কিনেছে। তাদের ইচ্ছেমতো চলতে হবে। কথা না শুনলে মারধর করত। রাজস্থানে যাওয়ার পর ওই নাবালিকা বেশ কিছুদিন বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরে ওই পরিবারের এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় সে বাড়িতে ফোন করে। বিষয়টি জানতে পারার পর তার উপর অত্যাচার চলতে থাকে। পুলিস জানিয়েছে, ওই. নাবালিকার তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নারী পাচারকারীদের এজেন্ট ছড়িয়ে রয়েছে। তারা মূলত গরিব বাড়ির মেয়েদের টার্গেট করে। বিভিন্ন অছিলায় তাদের জালে জড়িয়ে বিক্রি করে বলে অভিযোগ। বহু নাবালিকা তাদের খপ্পরে পড়ে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত তাদের জায়গা হয় অন্ধকার জগতে।
সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিস বিভিন্ন হোটেলে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন নাবালিকাকে উদ্ধার করেছে। কখনও ভালোবাসার অভিনয় করে, আবার কখনও কাজের টোপ দিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয়।
এক আধিকারিক বলেন, অন্ধকার জগতে একবার চলে গেলে ফিরে আসার পথ থাকে না। অনেকে বাড়িতে বিষয়টি জানাতে পারে না। তবে গলসির ওই নাবালিকা সাহস করে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপরই তার পরিবারের লোকজন পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়।
ওই নাবালিকাকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর সেই সময় ‘বর্তমান’এ প্রকাশিত হয়েছিল। পুলিস সুপার বিষয়টি জানার পরই তাকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়। অবশেষ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর পরিবারের লোকজনের মুখে হাসি ফুটেছে।