পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নতুন করে সেজেছে দীঘার অদূরে নায়েকালী মন্দির
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাঁথি: নতুন করে সেজে উঠেছে দীঘা লাগোয়া পূর্ব মুকুন্দপুর গ্রামে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন নায়েকালী মন্দির চত্বর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীঘা সফরকালে তাঁর হাত ধরে নবসাজে সজ্জিত এই পর্যটন পরিকাঠামোর উদ্বোধন হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। রঙিন আলোকমালায় সেজে উঠেছে মন্দির সহ আশপাশের অংশ। সবুজ ঘাস বসানো হচ্ছে গোটা মন্দির চত্বরে। সব মিলিয়ে পর্যটনের নতুন ‘ডেস্টিনেশন’ হতে চলেছে নায়েকালী মন্দির সহ সংলগ্ন এলাকা। এই এলাকাটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা (ডিএসডিএ)। পর্যটকদের বিনোদন ও মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে এখানে থ্রিডি থিয়েটার এবং লেজার লাইট শো ও সাউন্ড সিস্টেম, রঙিন ওয়াটার ফাউন্টেন প্রভৃতি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এজন্য উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত বিশালাকার হলঘর তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে হলঘরে পড়েছে রঙের পোঁচ। হলঘরের সঙ্গে বেশকিছু স্টল রয়েছে, যেখানে পুজো ও ভোগের নানা সামগ্রী বিক্রি সহ অন্যান্য দোকানপাট থাকবে। পর্যটন দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় এই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে ১৭ কোটিরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মন্দির সংলগ্ন ঝিলে থাকবে বোটিংয়ের ব্যবস্থা। এছাড়া থাকবে আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় আইটেম। জানা গিয়েছে, রঙিন আলোকমালায় সজ্জিত ওয়াটার ফাউন্টেনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লেজার লাইট শো থাকবে। যেখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেমের দীঘা পর্যটন কেন্দ্রের ইতিহাস, নায়েকালী মন্দিরের কাহিনী সহ নানা চিত্র তুলে ধরা হবে। আগত মানুষজন সহ পর্যটকরা টিকিট কেটে এই শো উপভোগ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, দীঘা-শৌলা মেরিনড্রাইভ রাস্তার পাশেই রয়েছে নায়েকালী মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে আলাদা আবেগ কাজ করে। দীর্ঘকাল ধরে নায়েকালীর ছোট পাকা মন্দির ছিল। কয়েকবছর আগে গ্রামবাসীদের আর্থিক সহায়তায় কোটি টাকা ব্যয়ে সুদৃশ্য এবং সুউচ্চ সাদা রঙের মন্দির তৈরি হয়। খাল, জলাভূমি এবং গাছগাছালি মিলিয়ে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশও বেশ মনোরম। সারাবছরই নায়েকালী মন্দির সহ সংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ দর্শনের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। তাঁরা মন্দির দর্শনের পাশাপাশি পুজোও দেন। তাছাড়া আগে মন্দির সংলগ্ন এই এলাকাটি কার্যত ঝোপজঙ্গলে ঘেরা ছিল। সংশ্লিষ্ট পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। তারপর ৩০ লক্ষের বেশি টাকা ব্যয়ে এখানে সাজানো-গোছানো পার্ক গড়ে তুলেছে। পর্যটক সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন মন্দিরে পুজো দিয়ে এবং পার্কে ঘুরে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে যান। ক্রমশ জায়গাটির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে দেখেই উন্নয়ন সংস্থা এখানে পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিল। তারপর পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ শুরু হয়। অবশেষে তা রূপায়ণ হল।
মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক তথা পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তপন কর বলেন, নায়েকালীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। স্থানীয়, দূরদূরান্ত থেকে আসা বহু মানুষ এবং পর্যটকরা এখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য মানত করেন। পুজো দেন। তাই আমরা অনেকদিন ধরেই মন্দির সংলগ্ন এলাকাকে ঘিরে পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছিলাম। এবার নায়েকালী মন্দির পর্যটনের অন্যতম ঠিকানা হতে চলেছে। রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাইচরণ সার বলেন, পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজও দ্রুততার সঙ্গে হয়েছে। আমরা আশাবাদী, মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে এই প্রকল্প উদ্বোধন হবে। -নিজস্ব চিত্র