নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: প্যান্ডেল, লাইট, মাইক সব আয়োজনই ছিল। ছাদনাতলায় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, তা একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন পুরোহিত। কিছুক্ষণ পরই বিয়ে শুরুর কথা ছিল। ওদিকে রান্না তখন প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। নিমন্ত্রিতরাও আসতে শুরু করেছেন একে একে। ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে জলপাইগুড়ির অরবিন্দ পঞ্চায়েতের মধ্য সেবাগ্রামে হানা দেন ব্লক প্রশাসন ও জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা। হাতেনাতে পাকড়াও করেন নাবালিকা পাত্রী ও নাবালক পাত্রকে। সঙ্গে আটক করা হয় পাত্রের বাবা-মা, পুরোহিত এবং রাঁধুনিকে। তাদের নিয়ে আসা হয় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। ফোনে এখবর পেয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান কনেযাত্রীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন ছড়ায়।
জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, নাবালক ও নাবালিকার বিয়ের আয়োজন হচ্ছে জানিয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে ফোন আসে। তারই ভিত্তিতে দ্রুত টিম পাঠানো হয়। সঙ্গে পুলিস ছিল। ঠিক সময় পৌঁছে ওই বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় নাবালক ও নাবালিকার বিয়ের আয়োজন হলেও বিষয়টি আগে থেকে জানতেই পারেননি অরবিন্দ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রাজেশ মণ্ডল। এনিয়ে এদিন তিনি বলেন, রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্পে সুবিধা দিচ্ছে। তারপরও বাল্যবিবাহ মোটেই মেনে নেওয়া যায় না। অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মীরাও আগে থেকে কেন খবর পাননি, তা নিয়ে অবাক লাগছে। এ ব্যাপারে জোরদার প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নাবালক পাত্র, নাবালিকা পাত্রী, পাত্রের বাবা-মা এবং পুরোহিত ও রান্নার ঠাকুরকে আটক করেছে পুলিস।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মেয়েটির বাড়ি হলদিবাড়িতে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকার বাবার ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। মেয়েটি ছোট থেকেই শিলিগুড়ির নকশালবাড়িতে মামারবাড়িতে থাকত। সেখানেই একটি স্কুলে পড়াশোনা করত। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জলপাইগুড়ির মধ্য সেবাগ্রামের ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ছেলেটি কৃষিকাজ করে। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হতেই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। মেয়েটি কয়েকদিন ধরে ছেলেটির বাড়িতেই ছিল বলে ছাত্রীর বাবার দাবি। ছেলের পরিবারের তরফে বিয়ের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
পাত্রীর বাবা বলেন, মেয়ে কয়েকদিন ধরে ছেলের বাড়িতে ছিল। ছেলের বাড়ির তরফেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কনেযাত্রী হিসেবে আমাদের জনা ত্রিশেক লোক যেতে বলা হয়েছিল। সেইমতো রওনা হয়েছিলাম। মাঝপথেই ফোনে খবর পাই, পুলিস এসেছে। মেয়ে ও ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়েছে। সঙ্গে আরও কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেয়ের যে ১৮ বছর হয়নি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই ছাত্রীর বাবা। তাঁর অবশ্য দাবি, আমি এখনই বিয়ে দিতে চাইনি। কিন্তু ওই ছেলেকে বিয়ে করবে বলে বাড়ি থেকে চলে যায় মেয়ে।