৬৫টি সংশোধনী প্রস্তাব সত্ত্বেও সহজেই পাশ দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদামাটা বিল। তবে, বিধানসভায় তা নিয়ে আলোচনার সময় বিরোধীদের তরফে সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হল ৬৪টি। শাসক দলের তরফেও জমা পড়ল একটি সংশোধনী। ফলে সব মিলিয়ে বাড়তি প্রায় এক ঘণ্টা ব্যয় হল। যদিও, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা শুধরে নেওয়ার জন্য শাসক দলের সংশোধনী বাদে কোনোটিই গৃহীত হয়নি। ধনেখালির রবীন্দ্রনাথ টেগোর বিশ্ববিদ্যালয় এবং খড়দহ-আগরপাড়ার রামকৃষ্ণ পরমহংস বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হয়ে যায়। তবে, রবিঠাকুরের ‘টেগোর’ পদবিতে ঔপনিবেশিক উচ্চারণের ছায়া থাকার অভিযোগে সেটি পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক শঙ্কর ঘোষ। বলা হয়, এটির নাম হোক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেটা নিয়ে অবশ্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবকদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁরা এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে সংশোধনীতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
রাজ্যে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। তবে, সেগুলির মান কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি বিধায়করা। অনেকে এগুলির পরিকাঠামো, শিক্ষক সংখ্যা প্রভৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বেসরকারিকরণের দিকে শিক্ষাকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল তাঁদের। জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে মান নিয়ে কোনও কথা বলা নেই। নীতি আয়োগও উচ্চশিক্ষায় বেশি এনরোলমেন্টের প্রস্তাব দিচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সময় দিতে হবে। তাছাড়া, বাংলার উচ্চশিক্ষার সার্বিক মান নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন ব্রাত্য। এ প্রসঙ্গে তিনি কলকাতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় মাপকাঠিতে সেরা দশে থাকার কথা মনে করিয়ে দেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা নেচারের সমীক্ষায় গবেষণাক্ষেত্রে কলকাতা শহরের শীর্ষস্থান পাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী এও জানান, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আরও বেশি নজর দিচ্ছে রাজ্য। বেসরকারিকরণের অভিযোগ খারিজ করার ক্ষেত্রে তিনি মনে করিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ বা গুজরাতের মতো রাজ্যগুলির চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি। আর তার মধ্যে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ই তৈরি হয়েছে মমতা সরকারের ১৩ বছরে। সেখানে বর্তমানে চালু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ১২টি। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণাখাতে বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া, নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেসরকারিকরণের দিকে উচ্চশিক্ষাকে ঠেলে দেওয়ার মতো ইস্যু তুলে বিরোধীদের বিদ্ধ করেন শিক্ষামন্ত্রী। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট, মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিল সই না করে আটকে রাখার জন্য রাজ্যপালেরও সমালোচনা করেন তিনি। বিজেপি বিধায়ক অরূপকুমার দাস স্টেট এডেড কলেজ টিচার বা স্যাক্টদের ভাতাবৃদ্ধির দাবি রাখেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। তাঁর দাবি, এই শিক্ষকরা সমান শিক্ষাগত যোগ্যতায় সমপরিমাণ কাজ করেও অনেক কম ভাতা পান। বিশেষ করে স্যাক্টদের মধ্যে ক্যাটিগরি-১ তালিকাভুক্তরা বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। সূত্রের খবর, স্যাক্টদের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। রাজ্যের আর্থিক সংস্থান হলেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা নেবে।