শহর জঞ্জালমুক্ত না হলে বন্ধ হবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ, তটস্থ পুরসভাগুলি
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ উপচে পড়ছে। জঞ্জালে অবরুদ্ধ নিকাশিনালা। কোথাও এক চিলতে ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকলে ক’দিনের মধ্যে তা অস্থায়ী ভ্যাটের চেহারা নিচ্ছে। ডোবা বা ছোট জলাশয়গুলি পরিণত হয়েছে আস্তাকুঁড়ে। বাড়িতেই পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথকীকরণের প্রকল্পও বিশ বাঁও জলে। কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয়, রাজ্যের বহু পুরসভার চিত্র এটাই। ভুক্তভোগী নাগরিকদের বারংবার আবেদন-নিবেদন পুরকর্তারা কানে তোলেন না বলে অভিযোগ। তবে এবার কড়া বার্তা দিয়েছে সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)। পুরসভাগুলিকে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, শহর জঞ্জালমুক্ত না রাখতে পারলে বন্ধ হবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। কেন্দ্র থেকে আসা প্রতিনিধি দল পরিদর্শনের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট দেবে, তাতে ‘স্টার র্যাঙ্ক’ না পেলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে যাবে। এহেন বার্তা পেয়ে ঘুম উড়েছে পুরকর্তাদের। কারণ, এমনিতেই সিংহভাগ পুরসভার ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা। নিজস্ব আয় তলানিতে ঠেকেছে। এই অবস্থায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ হলে পুরসভা চালানোই যে দায় হবে, বুঝতে পারছেন আধিকারিকরা। তাই সুডা’র বৈঠক থেকে ফিরে পুরসভাগুলি দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছে। ‘স্টার’ জোগাড় করতে এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে খবর।
গত সপ্তাহে সল্টলেকে সুডা’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা গিয়েছে, কয়েক বছর ধরে স্বচ্ছ ভারত মিশন (আরবান ২.০) প্রকল্প চলছে। বেশিরভাগ পুরসভাই নিয়ম মেনে কাজ করছে না। এমন চলতে থাকলে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সুডা’র কর্তারা। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় গাইডলাইন আরও একবার পুরসভাগুলিকে মনে করিয়ে দিয়েছে সুডা। ‘স্টার’ পেতে গেলে কোন কাজ বা পরিষেবাগুলি নিশ্চিত করতে হবে, তাও বলে দেওয়া হয়েছে সেখানে। যেমন, জঞ্জাল সংগ্রহের সার্ভিস চার্জ চালু, বাড়িতেই আবর্জনা পৃথকীকরনের পর সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণের পর উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, রাস্তার ধারে কোনও জলাশয়, নালা, খাল বা নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের সীমানা, ড্রেন, নালা, জলাশয়, নদী, খাল জিও ট্যাগিং করতে হবে। সৌন্দর্যায়ন সহ সমস্ত মাপকাঠিতে নির্দিষ্ট নম্বর পেলে তবেই ‘স্টার র্যাঙ্কের’ জন্য আবেদন করা যাবে। তারপর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেবে। একবার পাওয়া ‘স্টার’-এর মেয়াদ এক বছর।
সুডা’র এই বার্তার পর পুরসভাগুলি রীতিমতো তটস্থ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জঞ্জাল সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে পানিহাটি পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরও হুঁশ ফেরেনি। এখন পরিস্থিতি আগের থেকে আরও জটিল হয়েছে। বারাসত, হাওড়া, চুঁচুড়া বা তারকেশ্বর—সর্বত্রই জঞ্জাল সমস্যা কমবেশি এক। টাকা বন্ধের বার্তার পর কি হাল ফিরবে? সেদিকেই আপাতত তাকিয়ে ভুক্তভোগী আম জনতা।