• বিয়ে বন্ধ হল সেই নাবালিকা অ্যাথলিটের
    আনন্দবাজার | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • প্রথমে দাবি করলেন, মেয়ে মোবাইল ফোনে আসক্ত। ভয় দেখাতে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে তুললেন অভাবের কথা। তবে কোনও অবস্থাতেই নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যায় না—প্রশাসন জোর দিয়ে এ কথা বলায় বদলাল সুর। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের নাবালিকা অ্যাথলিটের মা মানলেন, ‘‘ভুল করেছি। এখনই মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি না। ও খেলা চালিয়ে যাক।’’ এক গাল হাসি নিয়ে মেয়ে বলল, ‘‘মাথা থেকে বোঝা নেমে গেল।’’

    ‘স্টিপলচেজ়’-এ রাজ্য ও জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় একাধিক পদক জেতা বছর সতেরোর মেয়েটিকে সম্প্রতি মুষড়ে থাকতে দেখে, তার প্রশিক্ষকের সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টা হচ্ছে নাবালিকার। তাই মেয়ের মন খারাপ। ছাপ পড়েছে খেলায়। প্রশিক্ষকের উদ্যোগে এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল নাবালিকা।

    মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা ‘সিডব্লিউসি’-র (শিশু সুরক্ষা কমিটি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুপুরের আগেই নাবালিকার বাড়িতে পৌঁছে যান সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান অসীম বসু-সহ আরও দুই সদস্য। যান মেয়েটির প্রশিক্ষক পরাগ ভৌমিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক রাতুল বিশ্বাস, স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি-সহ অনেকে। নাবালিকার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। তার মা, দুই ভাই ছিল।

    ‘সিডব্লিউসি’-র কর্তারা মেয়েটির মাকে বোঝান এবং শেষমেশ বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে রাজিও করান। আর্থিক কারণে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছিলেন মেনে নিয়ে অ্যাথলিটের মা বলেন, “এখন মেয়ের বিয়ে দেব না। ও খেলা চালিয়ে যাবে।” সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, “অনেক বোঝানোর পরে উনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না, কথা দিয়েছেন। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এই অবস্থায় নাবালিকা ও তার এক ভাইয়ের জন্য প্রতি মাসে চার হাজার টাকা অনুদানের ব্যবস্থার চেষ্টা করছি। ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত কিংবা সর্বোচ্চ তিন বছর তারা সে অনুদান পাবে।”

    স্বপ্নের দৌড় না থামায় উচ্ছ্বসিত তরুণী অ্যাথলিট বলে, “এখন আরও মন দিয়ে খেলাধুলো করব। যতটা পারব, পড়াশোনাও চালিয়ে যাব।” তার প্রশিক্ষক পরাগ ভৌমিক বলেন, “পরিবারটি বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ভাল লাগছে। এ বার আমার ছাত্রী মন দেবে প্র্যাকটিসে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)