এই সময়: রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ফের টানাপোড়েন শুরু! রাজভবন ধাপে ধাপে উপাচার্য নিয়োগ করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বিধানসভায় নিজের কক্ষে বুধবার ব্রাত্য বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। এই ভাবে এটা চলতে পারে না।’
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সার্চ কাম সিলেকশন কমিটির সুপারিশ মেনে রাজ্যের ৩৬টির মধ্যে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নবান্ন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই রাজভবনে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রাজভবন ৬ ডিসেম্বর ছ’জন ও মঙ্গলবার মাত্র চারজনের নিয়োগপত্র ইস্যু করেছেন।
তারপরই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘একবারে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে সই করা উচিত রাজ্যপালের। অন্তত সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার দেখে আমি যা বুঝেছি। পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছেড়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপালের ভিন্নমত থাকলে, তিনি সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর ওপরেই ছাড়বে। ফলে ধাপে ধাপে নিয়োগে সই করা শিশুসুলভ এবং সময় নষ্টকারী।’
এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, ‘যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ওঁর সম্মতি আছে, সেগুলো উনি (রাজ্যপাল) একসঙ্গে সই করে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিন। আর যেগুলোয় অসম্মতি আছে, সেগুলো সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দিন।’
শিক্ষামন্ত্রী জানান, আচার্যর অনধিকার হস্তক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পঠনপাঠনে সাময়িক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। এরপরও সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির সুপারিশ ও মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এবং পছন্দ অনুসারে সবগুলোয় একসঙ্গে সই না করে, আজ ছটা, কাল পাঁচটা এবং পরশু চারটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর নাম সই করছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে উপাচার্য নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা করছেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও প্রলম্বিত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টকে অস্বীকার করার কোনও জায়গা অথবা এই শ্লথ করে দেওয়ার কোনও অধিকার রাজ্যপালের আছে বলে তিনি মনে করেন না। বিষয়টি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।
যদিও রাজভবন সূত্রে খবর, সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী যে নামগুলো পাঠিয়েছেন, তিনি (আচার্য) তাদের নিয়োগ দেবেন। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সার্চ কাম সিলেকশন কমিটি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনটি নামের একটি প্যানেল দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের মধ্যে একজনকে পছন্দ করে তাঁর নামে টিক দিয়েছেন। আচার্য তা পরীক্ষা করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগ দেওয়ার আগে আলোচনাও করেছেন। তাঁদের কারও বিষয়ে রাজ্যপালের কোনও আপত্তি থাকলে, অথবা প্রার্থীদের অনুপযুক্ত মনে করলে, আচার্য তাঁদের নিয়োগ করবেন না।
এখানেই পাল্টা প্রশ্ন ব্রাত্যর। তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারেই বলা হয়েছে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিতের নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক পৃথক সার্চ কমিটি প্রতিটিতে ক্রমানুসারে ১, ২, ৩ করে নামের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পছন্দ ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্ভাব্য উপাচার্যদের তালিকা করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন। আচার্য তাতে সই করে সরকারের কাছে ফেরত পাঠাবেন।
রাজ্যপালের যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কোনও নামে অসম্মতি বা অসুবিধা থাকলে, তিনি সেই নামগুলো সুপ্রিম কোর্টে পাঠাবেন। তারপর সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এমন হতে পারেই ৩৫টির মধ্যে ওঁর পাঁচ–সাতটি নামে আপত্তি রয়েছে। উনি সেগুলো সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দিন। শীর্ষ আদালতও ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে উপাচার্য নিয়োগে আচার্যর থেকে সুপ্রিম কোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর উপর বেশি নির্ভর করেছে। রাজ্যপালের উচিত সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার যাতে মান্যতা পায়, তা নিশ্চিত করা।
রাজভবনের তরফে পাল্টা জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে সোমবারই আচার্য তথা রাজ্যপালের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি রাজ্যের সমস্ত উপাচার্য নিয়োগে তিন সপ্তাহ বাড়তি সময় চেয়েছিলো। সর্বোচ্চ আদালত তা অনুমোদন করেছে। এরপরও অযথা বিতর্ক অর্থহীন। শুধু রবীন্দ্র ভারতী ও রাজ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দফায় উপাচার্য না মেলায় দ্বিতীয়বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।