দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছেন ‘সাধু’। পরনে ধুতি, সাদা ফতুয়া। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে তিলক। শ্বেতশুভ্র দাড়িতে আলগোছে হাত বুলিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে তিনি হাঁক দিলেন, ‘কই গো মা জননী, সাধুকে কিছু ভিক্ষা দিন।’ ‘মা জননী’ ও তড়িঘড়ি ভিক্ষা দিলেন। স্মিত হেসে ‘সাধু’ চললেন পরের বাড়িতে।
গত দিন দশেক ধরে শিলিগুড়িতে আচমকা ‘সাধু’দের উপস্থিতি কিঞ্চিৎ বেড়ে গিয়েছিল। প্রথম দিকে সে ভাবে কারও কিছু সন্দেহ হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পরেই শুরু হলো হইচই। কলিং-বেল শুনে বাড়ির মালিক দরজা খুলে দেখলেন, ভিক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন ‘সাধু’। ‘দাঁড়ান’ বলে ভিতর থেকে ভিক্ষা এনে বাড়ি মালিক দেখলেন, ‘সাধু’ নেই। দরজা বন্ধ করে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, সাধুর সঙ্গে সঙ্গে সাধের সাইকেলটাও হাওয়া!
পুলিশ জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন বাড়ি থেকে এই ক’দিনে অন্তত খান দশেক দামী সাইকেল (দাম গড়ে আট থেকে দশ হাজার টাকা) চুরি গিয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ভিক্ষার নাম করে রেকি করে যেত তস্করের দল। পরে সময় বুঝে সাইকেল চুরি করত।
একের পর এক চুরির ঘটনায় তক্কে তক্কে ছিল প্রধাননগর থানার পুলিশ। শহরের একাধিক সিসিটিভির ক্যামেরায় নজরদারি শুরু করে তারা। ক্যামেরাতেই একজনের সন্ধান পায় পুলিশ। সেই সূত্র ধরে সোমবার রাতে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের গেটবাজার থেকে শিবু পালকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিআরআই কলোনি এলাকার একটি জঙ্গল থেকে আটটি সাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতকে মঙ্গলবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘বেটা সাধুর বেশে ভিক্ষা করতে এসে রেকি করত। তারপরে সুযোগ বুঝে সাইকেল নিয়ে চম্পট দিত।’
পুলিশ জানিয়েছে, চুরি করা সাইকেলগুলো কিছুদিন গোপন জায়গায় রেখে দিত শিবু। তারপরে ভালো দাম পেলে সেগুলো বিক্রি করে দিত। পুলিশের দাবি, সাধু সাজতে শিবু নকল চুল, দাড়ি ও ধুতি কিনেছিল। সেগুলোও তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হবে।
শিলিগুড়ির পোকাইজোত এলাকায় চুরির ঘটনায় রোহিত ওঁরাও এবং গৌরব ওঁরাও নামে দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভক্তিনগর থানা এলাকায় চুরির ঘটনায় হিরণ দাস এবং রোশন বর্মন নামে দু’জনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাধুবেশে চুরির ঘটনায় শিলিগুড়ির এক রসিকজনের মন্তব্য, ‘এ তো একেবারে ‘হরি হরি’, 'হর হর’ কেস!’