এই সময়, দক্ষিণেশ্বর, বর্ধমান ও ভাঙড়: অনলাইনে বিপুল পরিমাণ টাকার বেআইনি লেনদেনের তদন্তে মঙ্গলবার সকালে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসাররা একযোগে হানা দিলেন কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণেশ্বর ও ভাঙড় এবং বর্ধমান শহরে। এই সংক্রান্ত মামলাটি অবশ্য রুজু হয়েছে বাংলায় নয়, অন্য একটি রাজ্যে। তবে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সন্দেহ, ওই চক্রে এ রাজ্যের একাধিক বাসিন্দা কোনও না–কোনও ভাবে জড়িত। ভাঙড় থেকে এক যুবককে এ দিন ইডি আটক করেছে।
ইডি–র একটি দল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে তল্লাশি চালায় দক্ষিণেশ্বর আলমবাজারের একটি বহুতলে। সেখানকার বাসিন্দা সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তল্লাশি চলে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে। সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু নথি ইডি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। এ দিন সকালে ইডি–র অফিসাররা অভিযান চালান বর্ধমান পুর এলাকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লস্করদিঘিতেও। সেখানে পেশায় দর্জি, মইনুল হাসান আলির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি–র তদন্তকারীরা।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে কাতারের দোহায় একটি টেলারিং স্টোর–এ বছর দুয়েক কাজ করেছেন মইনুল। অভিযোগ উঠেছে, মইনুলের মাধ্যমে পূর্ব বর্ধমান জেলার দু'জন রাইস মিল ব্যবসায়ী হাওয়ালার মাধ্যমে মোটা টাকা বাইরে পাঠাতেন। মইনুল এ দিন বলেন, 'বহু আগে আমি টাকা পাঠানোর ব্যবসা করতাম। এখন আর করি না। আমার বাড়িতে একটি কম্পিউটার আছে। তাতে এখন আমার ছেলে গেম খেলে।'
তা হলে তাঁর বাড়িতে কেন এল ইডি? মইনুলের বক্তব্য, 'ওঁরা আমাকে জানান, এ বছরের ২১ নভেম্বর আমার অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই টাকা আমি কোথা থেকে পেয়েছি, ওঁরা তার হিসেব চাইছিলেন। আমি ওঁদের জানিয়েছি, এক বছর আগে বিদেশে যাওয়ার সূত্রে দক্ষিণেশ্বরের সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।
এ বছর ২১ নভেম্বর তিনি আমাকে ফোন করে বলেন, ওঁর অ্যাকাউন্টের ট্রানজ়াকশন লিমিট ক্রস করে যাওয়ায় টাকা পাঠাতে পারছেন না। তাই, আমার অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা পাঠাচ্ছেন। ওঁর লোক এলে আমি যেন টাকাটা তুলে দিই।' সেই মতো শেখ সইফুল নামে এক ব্যক্তির হাতে তিনি টাকা তুলে দেন বলে মইনুলের দাবি। তিনি এ–ও বলেন, 'এর আগে সইফুলকে আমি কোনও দিন দেখিনি।'
ইডি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, লেনদেনের বিষয়টি সুকান্ত অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে মইনুলের বক্তব্য, 'আমার সামনেই ইডি–র কর্তারা সুকান্তকে ফোন করেছিলেন। সুকান্ত সবটা অস্বীকার করে বললেন, তিনি নাকি আমাকে কোনও টাকা দেননি। ইডি অফিসাররা আমাকে জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে হয় ১০ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে, না–হয় যে লোক আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গিয়েছে, তাকে ধরিয়ে দিতে হবে।'
মইনুল বলছেন, 'আমার অ্যাকাউন্টে টাকা কী ভাবে এল, সেটা ইডি–কে জানাতে হবে। না–হলে আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এমনটা ওঁরা বলে গিয়েছেন।'
আবার, এ দিন সাতসকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থানা এলাকার বড়ালি ঘাটেও ইডি অভিযান চালায়। বড়ালীর যুবক জলিল মোল্লা ওই তল্লাটেই দীর্ঘদিন ধরে একটি সাইবার ক্যাফে চালাতেন। তা ছাড়া, তিনি কৈখালির একটি সাইবার ক্যাফের সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ, এই সাইবার ক্যাফে থেকেই কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে। সেই ঘটনার তদন্তে এসে জলিলকে আটক করে নিয়ে যায় ইডি। তবে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ, ইডি–র আধিকারিকরা সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।