বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কষ্ট দেয়, নেতা বেছেছি আমরা, তাই দায় তো আমাদেরই!
আনন্দবাজার | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
চুল, দাড়ি-গোঁফে নুন-মরিচের ঝিলিক। সে সব ছাপিয়ে প্রবল প্রেমিক পুরুষ তিনি। বাংলাদেশের অভিনেত্রী সানজানা মেহরানকে সমস্ত প্রেমের গান উৎসর্গ করেছেন, কাঁটাতারের ব্যবধান তুচ্ছ মেনে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ভ্রমণ সংস্থার জন্মদিনে এসে ভোগবাদ, ভালবাসা, বাংলাদেশ থেকে আরজি কর-কাণ্ড— কিছুই বাদ দিলেন না। বিপরীতে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: আপনার নাকি বেড়ানো হয় না। অনির্বাণ কি বেড়াতে ভালবাসেন না?
অনির্বাণ: মফস্সলে যে পরিবারে এবং যে সময়কালে বড় হয়েছি, তখন এত বেড়ানোর চল ছিল না। বড় জোর ঝাড়গ্রাম, দিঘা, পুরী বা দার্জিলিং। খুব বেশি বে়ড়ানোর সুযোগ হয়নি। ফলে, বেড়ানোর খিদে কম তৈরি হয়েছে। পরে থিয়েটার করতে এসে পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি। সিনেমার দৌলতে বিদেশ ভ্রমণ— ব্যাঙ্কক, পটায়া, আমেরিকা। মাঝে মধ্যে প্রকৃতির মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াতে, অবসর কাটাতে ভালই লাগে।
প্রশ্ন: সুযোগ পেলে কোথায় বেড়াতে যাবেন?
অনির্বাণ: নিজের দেশের অনেক কিছু দেখা বাকি। গুজরাত, কর্নাটকে গিয়েছি। কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, কেরল দেখিনি! এগুলো দেখার খুব ইচ্ছে। গুজরাত ঘুরে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেলে ইউরোপে যাব। বিশেষ করে গ্রিস।
প্রশ্ন: পাহাড় না সমুদ্র, কোনটা টানে?
অনির্বাণ: পাহাড়। সমুদ্রও ভাল লাগে।
প্রশ্ন: অনির্বাণকে তো বাংলাদেশ খুব ডাকাডাকি করছে...
অনির্বাণ: (হেসে ফেলে) একটি কেন! তিনটি গানই সানজানাকে উৎসর্গ করলাম। তিনি প্রকাশ্যে ভালবাসা জানিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত গান ওঁকেই উৎসর্গ করা উচিত।
প্রশ্ন: প্রেম তো হল। বাংলাদেশে গিয়ে কাজও করবেন তো?
অনির্বাণ: এখনও তেমন ভাবনা নেই। সিরিজ় ‘মহানগর ৩’-এর অপেক্ষায় রয়েছি। সিরিজ়-এর দ্বিতীয় পর্বের একেবারে শেষ দৃশ্যে ছিলাম। রজক আলি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ‘মহানগর ৩’ হলে আমার ডাক পাওয়ার কথা। কবে করবে জানি না।
অনির্বাণ: হ্যাঁ ছুঁয়ে যায়। খারাপ লাগে। কী বলব? আমরা আমাদের রাজনীতির দায়ভার দক্ষিণপন্থী নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছি। পুঁজিবাদী আর দক্ষিণপন্থী মতবাদ— আমরা এই করতেই তো পৃথিবীতে এসেছি। ঝামেলা বাঁধাতে, হাঙ্গামা তৈরি করতে। রাজনীতির এটা একটা মুখ। এটা করে সমাজের মধ্যে যত রকম অশান্তি, যত রকম ব্যবধান তৈরি করা যায়, করতে থাকো। আর মুনাফা লুটতে থাকো। ভোট লুটতে থাকো। শিল্পপতির টাকা বাড়তে থাকুক। সবাই জানে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার ঘৃণা কম। আমার রাগ কম। আমার মা-বাবা, স্কুল, নাটক-ছবির শিক্ষাগুরুরা এর উল্টোটাই শিখিয়েছেন। সময় যা-ই হোক, আমি সেই শিক্ষা আঁকড়েই চলতে চাই। আমি স্নেহের লোক, ভালবাসার লোক, সহমর্মিতার লোক। প্রতিশোধপন্থী নই। যদি ইতিহাসে কোনও রক্ত লেগে গিয়ে থাকে, আধুনিক সভ্যতার সকলের কাজ সেই দাগ মুছে দেওয়া। সেই দাগকে শুশ্রূষা দেওয়া। সেই দাগকে খুঁচিয়ে ঘা করা নয়। আমি এটা সময়ের দায়িত্ব বলে মনে করি। রাজনৈতিক নেতারা সেটা মনে করেন না। তাঁদের যেটা কাজ তাঁরা সেটা করছেন।
প্রশ্ন: ছবির উৎসবে আপনাকে দেখা গেল না। গায়ে যাতে কোনও রং না লাগে তার জন্য?
অনির্বাণ: (ফের হাসি) আমি তো আগেও গিয়েছি। ও সব কিছু না। এ বার যাওয়া হয়নি কাজের কারণে।
প্রশ্ন: বিতর্ক এড়িয়ে গেলেন? লোকে বলছে চুলে, দাঁড়ি-গোঁফে রুপোলি ঝিলিক। দাম্পত্য বিপর্যয় হোক বা আরজি কর-কাণ্ড— অনির্বাণ আর আগের মতো সরব নন। বড় হয়ে গিয়েছেন?
অনির্বাণ: হয়েছি হয়তো! (একটু থেমে পাল্টা প্রশ্ন) এ রকম কথা কি কেউ বলছেন? আমি তো জানি তাঁরা গালাগালি দিচ্ছেন (জোরে হাসি)।
প্রশ্ন: তা হলে বাংলা গান না শুনতে চাওয়া নিয়ে, বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা পাওয়া নিয়ে, গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর প্রতিবাদ নিয়ে বলুন?
অনির্বাণ: আমার মত বলে, প্রত্যেকের নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানানোর স্বাধীনতা রয়েছে। আমি সবার সব কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। যখনই সমাজমাধ্যমে কোনও বিষয় উত্থাপিত হচ্ছে, তখনই আমায় কিছু একটা মন্তব্য করতে হবে বা সবাইকে মন্তব্য করতে হবে— আমি এই সংস্কৃতির বিরোধী। ভারতের সংবিধান যে অধিকার দেয় তাতে হিংসা না ছড়িয়ে স্বাধীন মত জানানোর স্বাধীনতা আপনার রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সংবিধানে সে কথা লেখা রয়েছে, এখনও পর্যন্ত মুছে দেওয়া হয়নি। আমারও সেই স্বাধীনতা রয়েছে, মতামত জানানোর। কিংবা মতামত না জানানোর।
প্রশ্ন: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই প্রথম অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ভৌতিক সিরিজ়ের নাম ‘ভোগ’। আপনাকে কী ভাবে দেখা যাবে?
অনির্বাণ: একদম অন্য রকম ভাবে। সত্যিই এই জ়ঁরে এখনও পর্যন্ত কাজ করা হয়নি। সেই জন্যই পরমদা বললেন, “তুই অনেক ধরনের চরিত্র করেছিস। কিন্তু এই ধরনের চরিত্রে কাজ করিসনি।” আমিও রাজি হয়ে গেলাম। দিন দুই পর থেকে শুটিং শুরু।
প্রশ্ন: অনির্বাণ ভোগে বিশ্বাসী না উপভোগে?
অনির্বাণ: (একটু থমকালেন। দম নিলেন, তার পর...) অনির্বাণ বাঁচায় বিশ্বাসী। বাঁচতে যা যা আসে, কখনও ভোগ, কখনও ত্যাগ, কখনও আনন্দ, কখনও দুঃখ— যেন নদীর মতো। জীবন তো নদীই। আমি বৈচিত্রে বিশ্বাসী। সব কিছুকেই গ্রহণ করে নিতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, “মনে রে আজ কহ যে, ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।”