ভারতের পতাকার অবমাননা ঠিক হয়নি লজ্জিত বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশি পড়ুয়ারা
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: ভারতের পতাকার অবমাননা ঠিক হয়নি। এটা মোটেই কাম্য নয়। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত লজ্জিত। ওপার বাংলায় এদেশের পতাকা পা দিয়ে মাড়ানোর ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া দিলেন বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশি পড়ুয়ারা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায়ও তাঁরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। উগ্র মৌলবাদের জন্যই এই ধরনের বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে, এমনটাই মত তাঁদের। তবে এই অস্থিরতা দ্রুত কেটে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আগের মতোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাইছেন তাঁরা।
বিশ্বভারতীর সূচনালগ্ন থেকেই শুধু এদেশ নয়, সারা পৃথিবীর নানা প্রান্তের ছাত্রছাত্রী কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করতে শান্তিনিকেতনে আসেন। বিদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই বেশি ভিড় হয়। ফি বছর বিশ্বভারতীর কলাভবন, সঙ্গীত ছাড়াও শিক্ষা ভবন, বিদ্যাভবন, পল্লিশিক্ষা ভবন, ভাষা ভবনের মতো বিভাগে ওপার বাংলার পড়ুয়াদের নিয়মিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই মুহূর্তে বিশ্বভারতীতে পদ্মাপাড়ের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১০০জন। পড়াশোনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সহ অন্যান্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এদেশের প্রতি বাংলাদেশিদের একাংশের বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে। তারই ফলস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভারতের পতাকা পা দিয়ে মাড়ায় মৌলবাদীরা। বিষয়টি ভারতের নাগরিকরা ভালোভাবে নেয়নি। ফলে, দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়। সেদেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হলেও শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশিরা নিরাপদেই পঠনপাঠন করছেন বলে জানিয়েছেন। সঙ্গীত ভবনের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী অমৃতা সরকার বলেন, আমার দেশের মানুষ এধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে ভেবেই আমি লজ্জিত। ভাবতে অবাক লাগছে দেশের আগামী দিনের ভার যাদের হাতে পড়বে সেই ছাত্রছাত্রীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এটা শিক্ষার অবমাননা। এই নিকৃষ্ট ঘটনা মোটেই কাঙ্খিত নয়। পল্লি সংগঠন বিভাগের সমাজবিদ্যার ছাত্র আবু সাঈদ বলেন, যেটা হয়েছে ধিক্কারজনক। এভাবে কোনও দেশের পতাকার অবমাননা করা যায় না। ভারত ১৯৭১ সালের পর থেকে বন্ধু হিসেবে আমাদের পাশে থেকেছে। অথচ পড়ুয়া ও নাগরিকদের একাংশ যা করল বাংলাদেশি হিসেবে লজ্জিত। স্নাতকস্তরের হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রাবণী সায়ন্তনী বলেন, বড্ড বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। এটা মোটেই কাম্য ছিল না। এজন্য খারাপ লাগছে। কারণ পতাকা মানেই জাতীয়তাবোধ। দেশের নাগরিকদের আবেগ জড়িয়ে থাকে। এই আবেগ নিয়ে খেলার অধিকার কারও নেই। দু’দেশের সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তবে এতকিছুর পরও আমরা শান্তিনিকেতনে নিরাপদে রয়েছি। আগামী দিনেও থাকব বলেও আশাবাদী।
ভাষা ভবনের বাংলা বিভাগের গবেষক রাজশাহীর রকি সরকার বলেন, যেটা হয়েছে সেটা উগ্র মৌলবাদের ফল। লাগাম টানার মতো প্রশাসনে এই মুহূর্তে কেউ নেই বলেই এই ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত। পাকিস্তানের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকতে চায় তারাই এধরনের ঘটনায় জড়িত। তারা চায় না ভারতের সঙ্গে কোনও সুসম্পর্ক থাকুক, এটা আমার ধারণা। দেশে হিন্দুদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা নিয়ে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। সুদিন ফিরবে বলে আমি আশাবাদী। পল্লিশিক্ষা ভবনের কৃষিবিদ্যার স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুস্মিতা দাস বলেন, যে দেশের পতাকাকে অপমান করা হয়েছে আমি সেদেশেরই শিক্ষার্থী। যেটা হয়েছে তা মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। একেবারেই সমর্থন করি না। দেশের পরিস্থিতিতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। নিজস্ব চিত্র