সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়া শহরে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট রয়েছে। অথচ গ্রামের মাটির বাড়ি দেখিয়ে গৃহশিক্ষকের স্ত্রীর নাম আবাস তালিকায় তোলা হয়েছে। কোথাও আবার একই বাড়িতে থাকলেও স্ত্রী ও মায়ের নামে দু’টি বাড়ি এসেছে। কোথাও আবার মা ও ছেলে একসঙ্গে থাকলেও দু’জনের নামই তালিকায় এসেছে। বাংলার বাড়ির তালিকা ধরে সার্ভে হওয়ার পরও এমন অভিযোগ ওঠায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
কাটোয়া-২ বিডিও আসিফ আনসারি বলেন, কাটোয়া শহরে যে ফ্ল্যাট রয়েছে এটা আমরা জানব কীভাবে? তবে আমরা পুনরায় তদন্ত করব। যাঁরা প্রকৃত যোগ্য তাঁরাই বাড়ি পাবেন।
এই ব্লকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রথমে ৭৬০০ জন উপভোক্তার নাম এসেছিল। তারপরই ব্লক প্রশাসন বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সরেজমিনে তদন্তে যায়। জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আগে বাড়ি পেলেও পুনরায় তাঁর নাম তালিকায় ছিল। শুধু তাই নয়, এক মহিলার নামে পাঁচটি বাড়ি এসেছিল। অথচ ওই মহিলাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তালিকা ধরে সার্ভে করতে গিয়ে এমন নাম পাওয়ার পরই বিতর্ক শুরু হয়। তারপর সার্ভে করে নতুন তালিকা তৈরি হয়। পুরো ব্লকজুড়ে ৪১০০ জনের নাম বাদ দিয়ে বর্তমানে ৩৫০০জন উপভোক্তার নাম রয়েছে বাংলার বাড়ির তালিকায়। তাঁদের বাড়ি পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
এরপরও ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও বাড়ির তালিকায় নাম থাকার অভিযোগ উঠল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া-২ ব্লকের পলসোনা পঞ্চায়েতের আউরিয়া, কুয়ারা পলসোনা গ্রামে এরকম বেশ কয়েকজনের তালিকায় নাম রয়েছে। কাটোয়া শহরের ঘুটকিয়াপাড়া এলাকায় ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট রয়েছে আউরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নীলমাধব ভট্টাচার্যের। তা সত্ত্বেও গ্রামের মাটির বাড়ি থাকায় তালিকায় তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে। নীলমাধববাবু বলেন, কাটোয়ার ফ্ল্যাটটি মায়ের নামে রয়েছে। সেখানে বাবা ও মা থাকে। আমি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের মাটির বাড়িতে থাকি। টিউশনি পড়িয়েই সংসার চলে। আমি ঘর পাওয়ার যোগ্য বলেই তালিকায় নাম এসেছে। যদিও গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, নীলমাধববাবু বাবা ও মায়ের সঙ্গেই থাকেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা ধুলু ঘোষের মাটির বাড়ি রয়েছে। বাড়ির তালিকায় তাঁর স্ত্রী মৌসুমি ঘোষ ও মা কল্পনা ঘোষ দু’জনের নাম রয়েছে। মৌসুমিদেবী বলেন, বাড়ি তৈরি হলে শাশুড়ি আলাদা থাকবে।
কুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মিলনকুমার ঘোষের নামে তালিকায় দু’বার নাম এসেছে। এমনকী তাঁর মা পদ্মারানি ঘোষের নামও রয়েছে তালিকায়। অথচ তাঁরা একই বাড়িতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাংলার বাড়ির তালিকায় সার্ভের পরও এমন বিতর্ক শুরু হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
কাটোয়ার বিজেপি নেতা সূর্যদেব ঘোষ বলেন, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হলেই এরকম চিত্র দেখা যাবে। অথচ প্রকৃত গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
যদিও পাল্টা তৃণমূলের কাটোয়া-২ ব্লক সভাপতি পিন্টু মণ্ডল বলেন, কার ফ্ল্যাট রয়েছে সেটা কীভাবে জানবেন সরকারি আধিকারিকরা? তবুও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় পুনরায় তদন্ত করে দেখা হবে। কাটোয়া শহরে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটের বাসিন্দার গ্রামের মাটির বাড়ি দেখে নাম এসেছে আবাসের তালিকায়।-নিজস্ব চিত্র