সরকারি বাংলা মাধ্যমে ভর্তি করাতে দু’দিন ধরেই লাইনে
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: রাজ্যজুড়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির করুণ ছবির মধ্যে একফালি সোনালি রেখা শান্তিপুরে। যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনার আমুল পরিবর্তন এসেছে। এখনকার সব বাবা-মা চান ছেলেমেয়েকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতে। তাঁদের এই চাওয়ার তাগিদে অজ গাঁয়েও এখন গজিয়ে উঠছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। স্বাভাবিক কারণেই শৈশব গঠনে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মহিমা কমতে কমতে এখন একেবারে তলানিতে। পাশাপাশি, হাইস্কুলগুলিতেও কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। রাজ্যের এমন বহু স্কুল রয়েছে, যেখানে সবে ধন নীলমনি একজন পড়ুয়া। স্কুল বাঁচাতে অভিভাবকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন শিক্ষকরা। সেক্ষেত্রে আশার আলো শান্তিপুরের একটি সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল। ব্রিটিশ আমলে তৈরি সেই স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করাতে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে লাইন দিয়েছেন অভিভাবকরা। অর্থাৎ, ভর্তির দু’দিন আগে থেকেই স্কুলের সামনে দীর্ঘ লাইন।
শান্তিপুর শহরের পণ্ডিত লক্ষীকান্ত মিত্র সরণি। এই রাস্তার পাশেই ‘রাধারানি নারীশিক্ষা মন্দির’—সরকার পোষিত বাংলা মিডিয়াম স্কুল। এলাকায় শান্তিপুর গার্লস হাইস্কুল বলে সমধিক পরিচিত। নারীশিক্ষার প্রসারে ব্রিটিশ ভারতে তৈরি স্কুলটি। বর্তমানে বয়স ৯০ বছর। রবিবার সেই স্কুলের সামনে দেখা যায় বিপরীত ছবি। বেলা ১১টা থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে। এরপর বেলা যত বেড়েছে লাইন ততই দীর্ঘ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম দেওয়ার কথা ছিল। আগে আসার ভিত্তিতে ফর্ম দেওয়া এবং ভর্তি নেওয়া হবে। মেয়েকে ভর্তি করাতে রবিবার থেকে ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকরা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে টানা দু’দিন রাস্তায় বসে রয়েছেন বাবা কিংবা মায়েরা।
স্বাভাবিকভাবেই গর্বিত ‘রাধারানি নারীশিক্ষা মন্দির’-এর প্রধান শিক্ষিকা তপতী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছিলেন, ‘নিশ্চিয় অভিভাবকরা মনে করেন আমাদের স্কুলে ভালো পড়াশোনা হয়। তা না হলে গোটা প্রজন্ম যখন ছুটছে ইংরেজি মাধ্যমের পিছনে, তখন একটা বাংলা মাধ্যম স্কুলের সামনে দু’দিন আগে থেকে অভিভাবকরা লাইন দেবেন কেন? আমরা চেষ্টা করি, মেয়েদের এখানে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার। চলতি বছর মাধ্যমিকেও শান্তিপুর ব্লকের প্রথম স্থানাধিকারী আমাদের স্কুল থেকেই।’
মেয়েকে ভর্তি করাতে দু’দিন আগে লাইন দিয়ে ফর্ম তুলে এনেছেন সত্যেন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ফর্ম দেবে জানতাম। কয়েকটি সিট রয়েছে। মেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি করতে গেলে আগে থেকে ফর্ম তুলতে হবে। তাই আমি রবিবার সকাল থেকে লাইন দিয়েছিলাম।’ একই সুরে মঞ্জু বিশ্বাস বলছিলেন, ‘স্কুলটা সত্যিই ভালো। পঞ্চম শ্রেণিতে মেয়েকে ভর্তি করার ইচ্ছে রয়েছে। তাই, রবিবার লাইন দিয়েছিলাম।’
রানাঘাট মহাকুমার অনেক স্কুলেই একটি শ্রেণিতে সাকুল্যে ৫০ জন পড়ুয়াও হচ্ছে না। সেখানে ‘রাধারানি নারী শিক্ষা মন্দির’-এ পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি। প্রতিটি শ্রেণিতে তিনটি করে সেকশন। শান্তিপুরের শিক্ষা অনুরাগীরা আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘রাজ্যের সব সরকারি বাংলা মাধ্যম যদি এমন হতো!’ নিজস্ব চিত্র