নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ সভা দ্রুত গ্রেপ্তার চান কুণাল
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম: নন্দীগ্রামে দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ সভা থেকে পুলিসের একাংশের বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে চড়ালেন কুণাল ঘোষ। রাজ্যে অন্তর্ঘাতে জড়িত পুলিস অফিসারদের বেছে বেছে সুন্দরবনে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিলেন। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে নন্দীগ্রাম-১ব্লকের সাতখণ্ড জালপাই গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতির ভাই বিষ্ণুপদ মণ্ডলের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে খুন করা হয়। হামলার ঘটনার পর ওই রাতে নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর লেখার সময় অভিযোগকারী তৃণমূলের বুথ সভাপতির স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে কুণাল এদিনের সভায় সরব হন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে থানা থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং দোলা সেন নন্দীগ্রামে নিহত তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডলের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা বিষ্ণুপদর স্ত্রী সুস্মিতা, দুই ছেলে সহ গোটা পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। সরকার এবং দল ওই পরিবারের পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দলের তরফে পরিবারকে আর্থিক সাহায্যও করা হয়। এরপরই নিহতের বাড়ির কাছে প্রতিবাদ সভা হয়। নিহত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী ও দুই ছেলে মঞ্চে ছিলেন। সভা শেষে কুণাল, দেবাংশুরা নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে পুলিসের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিবাদ সভায় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিসের একাংশ ন্যায়ের পক্ষে নেই। ক’দিন আগে একই ধরনের ঘটনা নিয়ে আমরা নন্দীগ্রাম থানায় এসেছিলাম। এভাবে কতদিন চলবে? আমাদের দায়দায়িত্ব বেশি। কারণ, আমরা সরকারে রয়েছি। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কোনও চড়া মানসিকতা নিতে পারি না। কিন্তু, সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা মার খাবে আর পুলিস দাঁড়িয়ে দেখবে, সেটা বরদাস্ত করব না। পুলিসের নেওয়া পদক্ষেপ হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেবে এমনটা চলতে পারে না।
উল্লেখ্য, ওই ঘটনায় জোড়া এফআইআর হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। একটা ঘটনায় দু’টো এফআইআর নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। তার অবশ্য জবাব এদিন দিয়েছেন কুণাল ঘোষই। তিনি বলেন, আমাদের দলের বুথ সভাপতি গুরুপদর হাতে কোপ মারা হয়। আর তাঁর ভাই বিষ্ণুপদর বুকে ছুরি। দু’জনেই ছটফট করছিলেন। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বিষ্ণুপদকে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। গুরুপদ নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ছিলেন। সেখান থেকে গুরুপদর স্ত্রীকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের মতো বয়ান লিখিয়ে সই করে দিয়েছে। তিনি তখন কিছুই বুঝতে পারেননি। অর্ধেক লোকের নাম বাদ দিয়ে চারজনের নাম দিয়ে সই করানো হয়। বিষ্ণুপদ মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী খুনের ঘটনায় থানায় গিয়ে এফআইআর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নন্দীগ্রাম থানায় লেখার জন্য গুরুপদর স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। যিনি টাকা চেয়েছেন তাঁকে ২৪ঘণ্টার মধ্যে থানা থেকে বের করতে হবে। আমরা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। এরকম কিছু পুলিস অফিসারের জন্য রাজ্য সরকারের বদনাম হচ্ছে। এসব সিপিএমের দালাল, বিজেপির দালাল। তিনি কর্মীদের অবশ্য সংযত থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে লড়াই করতে হবে বলে জানিয়েছেন।
দেবাংশু বলেন, এই মাটিতে কিছু পুলিস অফিসার বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা তৃণমূল কর্মীদের মানুষ বলে মনে করেন না। কোনও ঘটনা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘটলে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এখানকার থানার অফিসারদের সেটিং হয়ে যাচ্ছে। এখানকার প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।