সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: ৫৫ বছরের পুরনো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনেক কিছুই নেই। চিকিৎসা সরঞ্জামের সমস্যার সঙ্গে এবার দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা, ডাক্তারের অভাব। বিভিন্ন বিভাগে স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের পাশাপাশি একাধিক ওয়ার্ডে মেডিক্যাল অফিসারের অভাব রয়েছে। বেশ কয়েকটি বিভাগে অধ্যাপক চিকিৎসকের সংখ্যাও কম। এই পরিস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর ভর দিয়ে চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। উত্তরবঙ্গের একমাত্র রেফারেল সেন্টারে ডাক্তারের অভাব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও ভাবাচ্ছে।
৫৫ বছরের পুরনো মেডিক্যাল কলেজে আজও আলাদা কার্ডিওলজি ইন্ডোর পরিষেবা তথা হৃদরোগের চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো হয়নি। এখানেও ডাক্তারের অভাব। ক্যাথল্যাব না থাকার অ্যাঞ্জিওগ্রাম, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি সহ হৃদরোগের ব্যয়বহুল গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না এখানে। সঙ্কটজনক সদ্যোজাতর চিকিৎসার জন্য সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে মেডিক্যাল অফিসারের অভাব প্রকট উঠেছে। এই হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে রেফার হয়ে আসা গুরুতর অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসার জন্য ভরসা এই এসএনসিইউ। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে মেডিক্যাল অফিসারের অভাবে রয়েছে। চক্ষু বিভাগেও একই সমস্যা। অপটিমিস্টিকের পদ এখানে খালি পড়ে রয়েছে। ফাঁসিদেওয়া ও বাগডোগরা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে দু’জন অপটিমিস্টিককে সপ্তাহে দু’দিন করে এনে কাজ করানো হচ্ছে। এছাড়াও ট্রমা কেয়ার সেন্টার চলছে জেনারেল সার্জারি বিভাগের ডাক্তারদের দিয়ে।
এরকম প্রতিটি বিভাগেই ডাক্তারের অভাবে উন্নত ও সঠিক পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সুপার স্পেশালিস্ট ব্লক তৈরি হয়ে পড়ে আছে। নিয়ম রক্ষার্থে কয়েকটি বিভাগের আউটডোর চালু হয়েছে সেখানে। এখনও ইন্ডোর পরিষেবা চালু হয়নি। সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা কতটা মিলবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক ডাক্তারের এই অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, কমবেশি প্রতিটি বিভাগেই আক্তারের অভাব দেখা দিয়েছে। মেডিক্যাল অফিসারের অভাব, সব থেকে বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সদ্যোজাত মুমূর্ষু সঙ্কটজনক শিশুরা বিভিন্ন জেলা থেকে রেফার হয়ে আসে। তাদের চিকিৎসার জন্য এসএনসিইউ’তে মেডিক্যাল অফিসারের অভাব। বাড়তি চাপের রয়েছি আমরা।
অভিযোগ, অনেক চিকিৎসক এখানে এলেও কিছুদিন পরেই বদলি এবং ভিআরএস নিয়ে চলে যান। অনেকে আবার নিয়মিত আসেন না। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার মাঝে হাউসস্টাফ, মেডিক্যাল অফিসারের সংখ্যা কমছে। অনেক পদ শূন্য হয়ে আছে বলে জানান সুপার। তিনি বরেন, একজন কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জেন আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু আট মাস কাজ করে তিনি বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন। এখন কোনও কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জেন নেই। চিকিৎসকের এই অভাব মেটানোর জন্য স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।