• ৪০ দিনের অধিবেশনে একবারও মুখ খোলেননি তৃণমূলের শতাধিক বিধায়ক, উষ্মা প্রকাশ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের
    বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: কেউ এসেছেন সময়ে। কেউবা নিজের মর্জি মতো। কিন্তু সময়ে বা অসময়ে যখনই এসেছেন, তাঁরা বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে শুধু বসেই ছিলেন। অন্য বিধায়কদের সঙ্গে খোশগল্পেও ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে যতদিন অধিবেশন হয়েছে, তাতে একদিনের জন্য নিজের কেন্দ্রের মানুষের জন্য মুখ খোলেননি, তৃণমূলের এমন বিধায়কের সংখ্যা ১০০’র বেশি। প্রশ্নোত্তর পর্ব, বিল, প্রস্তাবের উপর কোনও আলোচনাতেও  অংশ নেননি তাঁরা। শাসক দলের সঙ্গে এই তালিকায় বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়কও আছেন, যাঁরা গোটা বছর অধিবেশন কক্ষে শুধু দর্শক হয়েই ছিলেন!

    এবছরের বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিন ছিল বুধবার। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের বিভিন্ন সময় মিলিয়ে প্রায় ৪০ দিন অধিবেশন হয়েছে। কিন্তু এই সময়কালের অধিবেশনে তৃণমূলের ১০০’র বেশি বিধায়কের ‘পারফরম্যান্স’ খুবই খারাপ। বিধানসভা হল বিধায়কদের বলবার জায়গা।  কিন্তু কেন্দ্রের সমস্যার কথা বলা তো দূরের, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনাতেও অংশ নেননি পরিষদীয় পাঠ নেওয়া তৃণমূলের এই জনপ্রতিনিধিরা। যেখানে পরিষদীয় দলের বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিধানসভায় এসে শুধু সই করে চলে গেলে হবে না। বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে হবে বিধায়কদের।

    এহেন বিধায়কদের পারফরম্যান্স এবার দলের আঁতস কাঁচের তলায় পড়তে চলেছে বলেই খবর! তৃণমূলের পরিষদীয় দল সূত্রে জানা গিয়েছে, নবীন ও প্রবীণ দু’রকম বিধায়কই রয়েছেন, ‘নীরব দর্শক’এর ভূমিকায়। ১০ বারের বিধায়ক ইসলামপুরের বর্ষীয়ান আবদুল করিম চৌধুরি। চলতি বছরের বিধানসভার অধিবেশনে তাঁকে কোনও বিষয়ে বলতে দেখা যায়নি। বর্ষীয়ানদের মধ্যে সাবিত্রী মিত্র, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, গুলশন মল্লিক, পরেশ পাল, সুদীপ্ত রায়, তপন দাশগুপ্ত, দুলাল দাস সহ আরও অনেকেই বিধানসভায় বলতে দেখা যায়নি। এছাড়াও কাঞ্চন মল্লিক, সোহম চক্রবর্তী, তাপস সাহা, রত্না চট্টোপাধ্যায়, আশিস মার্জিত, সৌমিক হোসেন, বিদেশ বোস, বিধান উপাধ্যায়, ব্রজকিশোর গোস্বামী, বিবেক গুপ্তা, ঊষারাণি মণ্ডল, শম্পা ধারা, রুকবানুর রহমান প্রমুখ বিধায়করা রয়েছেন, যাঁদের বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি। একটি তালিকা তৈরি করে দেখা গিয়েছে, ‘নিরুত্তর’ থাকা তৃণমূল বিধায়কদের সংখ্যা একশোর কাছাকাছি। এবিষয়ে পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিধানসভার অধিবেশনে কয়েকজন বিধায়কের পারফরম্যান্স খুব ভালো। আবার বেশ কিছুজন রয়েছেন, যাঁদের অধিবেশন কক্ষে বলতেই দেখা যায় না। যাঁরা কিছু বলেন না, সেই সমস্ত বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলা হবে, যাতে আগামী বছর অধিবেশনে তাঁরা বলবার ক্ষেত্রে আগ্রহপ্রকাশ করেন। ঘটনাচক্রে এদিনই বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিনে প্রথমবার ভালো বক্তৃতা দিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যয়ের কাছ থেকে ‘মেডেন স্পিচ’এর তকমা পেয়েছেন বাগমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাত।

    ইদানিং দেখা গিয়েছে, শাসক শিবিরের অপূর্ব সরকার, রানা চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ আলি, সমীর জানা, রফিকুর রহমান, সুকান্ত পাল, ইটাহারের মোসারফ হোসেনের বক্তব্য সকলের নজর কেড়েছে। আবার নবাগত বিধায়ক হিসেবে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্তি পান্ডে বিভিন্ন বিষয় অধিবেশনে তুলে ধরছেন। অপরদিকে পদ্মশিবিরের বিধায়ক গোপাল সাহা, বরেণচন্দ্র বর্মণ, পবন সিং, নীরজ তামাং জিম্বা, আশিসকুমার বিশ্বাসের মতো কয়েকজনকে অধিবেশনে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তৃণমূল ও বিজেপির এই বিধায়করা আগামী অধিবেশনে ‘নীরবতা ভাঙেন’ কি না, এখন সেটাই দেখার!
  • Link to this news (বর্তমান)