স্ত্রীর হোম ডেলিভারিতেই চলে সংসারের খরচ? গুজবে মর্মাহত কবি জয় গোস্বামী
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: ‘এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও শেষ করিনি!’ কবিতার সঙ্গে তাঁর ৫০ বছরের ‘প্রেম’। হাজার হাজার শব্দ-অক্ষর বুনেছেন আপন খেয়ালে। পাঁচ দশক ধরে জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য কবিতার। পাঠকদের মনে মণি-মুক্তোর মতো জায়গা করে নিয়েছেন মেঘবালিকা, বেণীমাধবরা। তিনি জয় গোস্বামী। দু’বাংলার প্রিয় কবি। এক বছর আগেই তাঁর কবিতা প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। আর কবিতা প্রকাশ করবেন না বলে ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। তবে, কলম তাঁর থামেনি। লিখে চলেছেন নীরবে। নিভৃতে। অথচ, আচমকাই তাঁকে ঘিরে ভাইরাল খবর! কবির অবসরে সংসারের হাল ধরতে সহধর্মিণী নাকি হোম ডেলিভারি করছেন? সমাজমাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটতে বেশি সময় নেয়নি। যাঁরা জয় গোস্বামীর একটি কবিতাও আজন্ম পড়েননি, তাঁদেরও কেউ কেউ গুজবের চাদর গায়ে চড়িয়ে প্রচারের লোভে নেমে পড়েছেন ময়দানে। তবে তাঁরা বোঝেননি, এই ময়দান নেহাতই ফেক নিউজের। আর সেই গুজব-খবরেই কবি ক্ষুব্ধ। মর্মাহতও। গভীর আঘাত বুকে নিয়েই ‘বর্তমান’কে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কথাগুলো এডিট করা হয়েছে। অন্নের অভাব তাঁর একেবারেই নেই। বরং কাজের সুযোগ এবং যথাযথ মর্যাদা—দুটোই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর হোম ডেলিভারি? স্ত্রী সেটা করে থাকেন শখেই।
গত বছর কলকাতা বইমেলার আগে ‘জয় গোস্বামীর কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানেই ঘোষণা করেছিলেন, লেখা চালিয়ে গেলেও আর কবিতা প্রকাশ নয়। কবিতা প্রকাশের পূর্তির ৫০ বছর উদযাপন তিনি তাঁর রচনা প্রকাশ বন্ধের মাধ্যমেই করতে চেয়েছিলেন। অনুরোধ ছিল, দয়া করে আমাকে কেউ ফোন করবেন না। চিঠিও লিখবেন না। তারপরই কিছুটা অন্তরালে চলে যান কবি। সল্টলেকের ছোট্ট ফ্ল্যাটে ব্যক্তিগত কাজকর্মে মগ্ন।
হঠাৎ গত দু’দিন ধরে তাঁকে নিয়ে একটি খবর ছড়িয়েছে। কবিতা থেকে অবসরের পর তাঁর স্ত্রী নাকি সংসার চালাতে হোম ডেলিভারি করছেন! সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল। প্রকৃত সত্যটা কী? খোঁজ নিতে গেলে বাড়িতেই পাওয়া গেল তাঁকে। একান্ত সাক্ষাৎকারে ‘বর্তমান’কে বললেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পুরশ্রীর উপদেষ্টা এবং আদিবাসী ও লোক সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রকাশনা সম্পাদকের পদ দিয়েছেন। সেখান থেকে আমি বেতনও পাই। তাই বলতেই পারি, এই বয়সেও কাজ করে আমি অন্নসংস্থান চালিয়ে যেতে পারছি।’ গুজব নিয়ে তাঁর স্পষ্ট জবাব, ‘আমার স্ত্রী রান্না করতে ভালোবাসেন। তাই তিনি ব্যক্তিগত ইচ্ছে থেকেই একটি হোম ডেলিভারি চালু করেছেন। অথচ এই বিষয়টিকে এমনভাবে দেখানো হচ্ছে, যেন আমার অবসরের পর স্ত্রীর হোম ডেলিভারির টাকায় সংসার চলছে। এইগুলো গুজব। মিথ্যা রটনা। এতে আমার পরিবারও কষ্ট পেয়েছে। আমরা সত্যিই মর্মাহত।’