চুঁচুড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের কর্মবিরতি ১১ দিনে, জঞ্জালের স্তূপে গোটা শহর যেন আস্তাকুঁড়, নির্বাক পুর-প্রশাসন
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: ১১ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, তাও অস্থায়ী কর্মীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনও সমাধান সূত্র বের করতে পারেনি চুঁচুড়া পুরসভা। জঞ্জাল অপসারণ না হওয়ায় গোটা শহর আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। সরকারি সাফাইকর্মীরা থাকলেও প্রশাসনের উদাসীনতায় তাঁদের কাজে নামানো যায়নি। দুর্গন্ধ আর আবর্জনার দাপটে শহরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। নাগরিকরা অসহায়। অভিযোগ, অস্থায়ী কর্মীদের আন্দোলনকে ঘিরে কার্যত হাতে হাত রেখে বসে আছে পুরসভা ও স্থানীয় প্রশাসন। এই অবস্থায় বাড়ির আবর্জনা ফেলার জন্য দিনমজুর ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বাসিন্দাদের। নাগরিকদের রোষের জেরে মুখ পুড়ছে শাসকদলের। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শহরের আড্ডা, ফ্ল্যাটবাড়ির চর্চায় তৃণমূলের ব্যর্থতাই উঠে আসছে বারবার।
এদিকে, বুধবার ফের পুরসভার অফিস সরগরম হয়ে ওঠে। চুঁচুড়া পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার ও ফিনান্স অফিসারকে অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্দোলনকারীদের হেনস্তার মুখে পড়েন ওই দুই অফিসার। তাঁরা ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে’ যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফলে, পুর পরিষেবার পাশাপাশি পুর প্রশাসন ভবনেও অচলাবস্থা তৈরির ইঙ্গিত মিলেছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এদিন গোপনে পুর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তা নিয়ে অস্থায়ী কর্মীদের একাংশ প্রতিবাদ করে। তারপরেই পুরভবনে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁরা কাউকে হেনস্তা করেননি। চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অমিত রায় বলেন, ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া হয় সরকারি তহবিল থেকে। আর অস্থায়ী কর্মীদের ভাতা দেওয়া হয় পুরসভার তহবিল থেকে। আন্দোলনকারীরা সব জেনেও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। দাবিদাওয়ার আন্দোলন উপলক্ষ্য মাত্র, তাঁদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। আমি পুর পরিষেবা চালিয়ে যেতে সরকারি কর্মীদের সাফাই কাজে নামিয়েছিলাম। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁদের উপর হামলা করায় তাঁরা কাজ করতে পারেননি।
এনিয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে কোনও বিবৃতি মেলেনি। তবে প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। তৃণমূলের অন্দর মহলের খবর, কর্মী আন্দোলনের রাশ পুরোটাই বিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছে। তৃণমূলের একাংশ প্রথমে বিরোধীদের কাজে লাগিয়েছিল। পরে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। দলের এক নেতা বলেন, পুরোটাই পরিকল্পনার অভাব। সেই কারণেই দলের মুখ পুড়ছে।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে দু’মাসের বকেয়া ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন চুঁচুড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা। তার জেরে শহরবাসীকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। মূলত শহরজুড়ে সাফাইকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন বাসিন্দারা। তারপর এগারো দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন, শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। যা তৃণমূলের ভাবমূর্তিকেই নষ্ট করছে। নিজস্ব চিত্র