• ‘রোবটের গলা’র স্বরে মহিলাকে ফোন, ৬৬ লক্ষ টাকার প্রতারণা
    বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রক্ত মাংসের মানুষ নয়। প্রযুক্তির জোরে রোবটের গলায় মানুষের স্বর। সেই স্বরেই প্রতারণার ফাঁদ। সাইবার প্রতারণার এই নয়া ছলে ৬৬ লক্ষ টাকা খোয়া গেল চারু মার্কেটের এক মহিলা ব্যবসায়ীর। শিয়ালদহের একটি হোটেল বুক করে চলছিল নয়া সাইবার প্রতারণা। প্রতারিত মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। অভিযুক্ত মুম্বইয়ের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম জগন্নাথ শিন্ডে (৩৬) ও বিনোদ পাওয়ার (৪০)।

    চারু মার্কেট থানা এলাকার একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা ওই মহিলার অভিযোগ, ৮ নভেম্বর তাঁর কাছে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ভারী স্বরের এক ‘ব্যক্তি’ তাঁকে বলেন, ফোন নম্বরটি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। দিল্লির সাইবার ক্রাইমের অফিসার পরিচয় দিয়ে সেই ফোন করা হয় বলে দাবি মহিলার। বলা হয়, ব্যবসায়ীকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে। গ্রেপ্তারি এড়াতে অগ্রিম জামিন পাওয়ার জন্য ৭০ লক্ষ টাকা দাবি করে ওই ব্যক্তি। এরপর আরও একটি ফোন আসে মহিলার কাছে। এবার পরিচয় দেওয়া হয় টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার এক আধিকারিক হিসেবে। বলা হয়, অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে ফোন নম্বরটি যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে দিল্লি সাইবার ক্রাইম বিভাগ। তাই দ্রুত ফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ঘাবড়ে গিয়ে অগ্রিম জামিন নেওয়ার পথেই হাঁটেন মহিলা। ৬৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা অভিযুক্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন তিনি। কিন্তু জামিনের কাগজ না আসায় তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন। 

    লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তভার হাতে নেয়। ভুয়ো আইপি অ্যাড্রেস কাজে লাগিয়ে ব্যাঙ্কের লেনদেন হওয়ায় সেটির হদিশ পাওয়া কঠিন হচ্ছিল। তাই ফোন কলের লোকেশন ট্র্যাক করার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। তদন্তে জানা যায়, রোবটের মাধ্যমে ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে ফোন করা হয়েছিল। কোনও মানুষ ফোন করেনি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে একসঙ্গে অন্তত ১০০ জনকে এ ধরনের ফোন করা যায়। পুরোটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে হয়েছে। তদন্তকারীরা মুম্বইয়ের লোকেশন পেলেও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিয়ালদহের একটি হোটেলের ঠিকানা পান গোয়েন্দারা। সেখানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়। তাদের কাছ থেকে মিলেছে তিনটি মোবাইল ফোন, একটি সিম কার্ড ও বেশ কিছু গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য। লালবাজার জানিয়েছে, তারা কী উদ্দেশ্যে শহরে এসেছে, তাদের কোনও মিডলম্যান আছে কি না, তার খোঁজ করছে লালবাজার।
  • Link to this news (বর্তমান)