দুই বান্ধবীর জন্মদিন, জালিয়াতির পাঁচ লক্ষ টাকায় সোনার নেকলেস উপহার
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিদ্যুতের বিলের মাধ্যমে প্রতারণা এখন অতীত। লালবাজারের ‘খাতা’ বলছে, গত এক বছরের মধ্যে এ ধরনের পুরনো কায়দায় প্রতারণার নজির তেমন নেই। কারণ প্রায় সকলেই এই ধাঁচের প্রতারণা সম্পর্কে সজাগ হয়ে গিয়েছেন। আচমকা বউবাজার থানায় বিদ্যুতের বিলের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসতেই অবাক হয়ে যান লালবাজারের কর্তারা। তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য পান তাঁরা। জানতে পারেন, বান্ধবীর আবদার মানতে গিয়ে সাইবার প্রতারণার ছক কষেছিল অভিযুক্তরা। প্রতারণার টাকায় সোনার নেকলেস কিনে প্রেমিকার জন্মদিনে উপহার দিয়েছে দুই যুবক। সাইবার প্রতারণার ‘আঁতুড়ঘর’ জামতাড়ার বাসিন্দা দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে লালবাজার। নাম সন্দীপ সাউ ও ফিরোজ আনসারি।
সম্প্রতি বউবাজার থানার দ্বারস্থ হন এক বৃদ্ধ। তাঁর অভিযোগ, সিইএসসির আধিকারিক পরিচয় দিয়ে একজন ফোন করে বলেন, তাঁর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বিদ্যুতের বিল সঠিকভাবে জমা হয়নি। তার জেরে এ মাসে তাঁর বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। সংযোগ অটুট রাখতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ট্রান্সফার করে দেন বৃদ্ধ। এরপর বৃদ্ধের ফোন ব্লক করে দেয় অভিযুক্তরা। প্রতারিত হয়েছেন বুঝে বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তদন্তকারীরা। তদন্তভার হাতে নেয় গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। গোয়েন্দারা লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখেন, জামতাড়ার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়েছে। এরপর সেই অ্যাকাউন্টে আর কোনও লেনদেন হয়নি। আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে প্রতারণা করা হলে স্বাভাবিকভাবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা তুলে নেয় প্রতারকরা। কিন্তু, এক্ষেত্রে তা ঘটেনি। সেখানেই সন্দেহ হয় পুলিসের। প্রতারণার দিন সাতেক পর দুর্গাপুরের একটি নামী স্বর্ণ বিপণির অ্যাকাউন্টে দু’দফায় প্রায় ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ডেবিট হয় ওই অ্যাকাউন্ট থেকে। দ্রুত আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটকে খবর পাঠায় লালবাজার। সেই স্বর্ণ বিপণি থেকে বেরনোর সময় পাকড়াও করা হয় অভিযুক্তদের। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বান্ধবীর আবদারের কথা। স্থানীয় পুলিসের নজর এড়াতে তাই তারা দুর্গাপুরের স্বর্ণ বিপণি থেকে নেকলেস কিনতে এসেছিল।