নিজস্ব প্রতিনিধি, দীঘা: অপেক্ষার দিন শেষ। আগামী ৩০ এপ্রিল, অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দ্বারোদঘাটন হবে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের। বুধবার সৈকত শহরে নির্মীয়মান মন্দির পরিদর্শন করে এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দির উদ্বোধনকে সামনে রেখে তার ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই শুরু হবে পুজোপাঠ। উপস্থিত থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আমন্ত্রণ জানানো হবে সারা দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট জনেদের।
এদিন দুপুরে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় বনশল, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি, কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস ও সনাতন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে মন্দিরের মধ্যেই একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্দির পরিচালনার জন্য ১৫ থেকে ২০ জনের একটি ট্রাস্টি বোর্ড বা অছি পরিষদ তৈরির সিদ্ধান্ত হয় এই বৈঠকে। যাতে থাকবেন ইসকন ও সনাতন ধর্মের প্রতিনিধি এবং মন্দিরের প্রধান পুজারি। সরকারের তরফে থাকবেন মুখ্যসচিব, জেলাশাসক সহ বেশ কিছু পদস্থ কর্তা। তবে এই ট্রাস্টিতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে থাকছেন না বলেই জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এই ট্রাস্টির দ্বারাই পরিচালিত হবে মন্দিরের যাবতীয় কাজ। আর তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসীরা। এই আবহে ইসকনের প্রতিনিধিদের জগন্নাথ মন্দির পরিচালনার ট্রাস্টি বোর্ডে রাখাটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একেবারে পুরীর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ২২ একর জমির উপর ছড়িয়ে থাকা দীঘার এই মন্দির। এর উচ্চতাও প্রায় ৬৫ মিটার। পুরীর মন্দিরের মতো, এখানেও প্রতিদিন বিকেলে পরিবর্তন করা হবে মন্দিরের ধ্বজা। ধ্বজা পরিবর্তন সহ মন্দির পরিচালনার একাধিক বিষয় নিয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন জেলাশাসক। পুরীর মতোই জগন্নাথ মন্দিরের ঠিক সামনে বগলা মায়ের মন্দির তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, জগন্নাথ ধামে এসে বাড়ির লোকেদের জন্য পুরীর মতোই খাজাও কিনতে পারবেন পর্যটকরা। এখানে মিলবে প্যাঁড়াও।
মন্দিরের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে জোর কদমে। যা শেষ হতে লাগবে আরও তিন মাস। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে উদ্বোধনের তোড়জোড়। আর উদ্বোধনের দু’মাসের মধ্যেই রথযাত্রা। সেই সময়েও ধুমধাম করে রথযাত্রা পালন হবে দীঘার জগন্নাথ ধামে। প্রতিবছর রথের দিন কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, ২০২৫ সালে তিনি আসবেন দীঘায়। সঙ্গে আসবেন ইসকনের রাধারমন দাসও। সেই কারণে উল্টো রথের দিন কলকাতায় ইসকনের অনুষ্ঠানে সামিল হবেন মমতা। রথযাত্রায় যে সোনার ঝাড়ু ব্যবহার হয়, সেটিও তৈরির দায়িত্ব ইসকনকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচ লক্ষ টাকা তিনি নিজেই দেবেন বলে জানিয়েছেন।
পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জগন্নাথ ধামের পাশেই তৈরি হবে একটি পুলিস আউটপোস্ট, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও দমকল কেন্দ্র। এই মন্দির দায়িত্বে থাকা সংস্থা হিডকোর সুখ্যাতি করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে সারা বিশ্বের মানুষকে এই মন্দিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।