খাসজমির পাট্টা কোটিপতি তৃণমূল নেতার মায়ের নামে ইস্যু, তোলপাড়
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তিন পুরুষ ধরে দখলে থাকা ভূমিহীন পরিবারের ৩৬ ডেসিমল খাসজমির পাট্টা রাতারাতি কোটিপতি তৃণমূল নেতার মায়ের নামে ইস্যু করা হয়েছে। দেশপ্রাণ ব্লকের পূর্ব মুকুন্দপুর গ্রামের ওই ঘটনায় তোলপাড় গোটা এলাকা। ওই তৃণমূল নেতা তরুণকুমার জানা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। ২০১৬-’২৩ টার্মে তিনি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও ছিলেন। আর্থিক দিক থেকে তরুণবাবু বেশ অবস্থাপন্ন। অথচ, তাঁর বিধবা মা সুদক্ষিণা জানার নামে একলপ্তে ৩৬ ডেসিমল জমির পাট্টা ইস্যু হয়েছে। আর ওই পাট্টা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার কাঁথির চৌধুরীবাড় গ্রামের স্বপন মাইতি মহকুমা শাসকের অফিসে আবেদন জানিয়েছেন। স্বপনবাবু বলেন, আমরা ভূমিহীন। বিপিএল তালিকাভুক্ত। তিন পুরুষ ধরে ওই জমিতে চাষাবাদ করছি। সুদক্ষিণা জানা একজন বয়স্ক বিধবা মহিলা। তিনি চাষবাদ করার অবস্থায় নেই। কোনওদিন ওই জমি তাঁর দখলেও ছিল না। আমরা বহুবার ওই জমির পাট্টার জন্য ভূমিদপ্তরে আবেদন করেছি। এনিয়ে তরুণবাবুর কাছেও গিয়েছি। সম্প্রতি জানতে পারি, তরুণবাবুর মায়ের নামে ওই জমির পাট্টা ইস্যু হয়েছে। ভূমিদপ্তরের অনলাইন স্টেটাসেও জমির পাট্টাদার হিসেবে সুদক্ষিণা জানার নাম দেখা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, দেশপ্রাণ ব্লকের পূর্ব মুকুন্দপুর মৌজায় ৪৯৯ দাগে ওই জমির একসময় মালিক ছিলেন লোকনাথ দাস। কিন্তু, সিলিং বহির্ভূত জমি থাকার কারণে বাম জমানায় লোকনাথবাবুর অনেক জমি খাস হয়ে যায়। সেই তালিকায় ৪৯৯ দাগের ওই ৩৬ ডেসিমল জমিও রয়েছে। যদিও স্বপনবাবু, তাঁর বাবা শম্ভুচরণ মাইতি এবং ঠাকুরদা ভূষণ মাইতি বহু বছর ধরে ওই জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। ওই জমি খাস হওয়ার আগে পূর্বতন মালিক লোকনাথবাবুকে খাজনা দেওয়ার অনেক পুরনো রসিদ তাঁদের কাছে রয়েছে। এখনও ওই জমিতে চাষাবাদ করে স্বপন মাইতির পরিবার। অথচ, কাগজে কলমে সেই জমির পাট্টাদার তৃণমূল নেতার মা।
স্বপনবাবু বলেন, ২০২২ সালের পর থেকে আমাদের কাছ থেকে পাট্টার জন্য আবেদন নেওয়া হতো না। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। তারপর চাষ করতে নেমে জানতে পারি, ওই ৩৬ ডেসিমল চাষযোগ্য জমির পাট্টা তরুণবাবুর মায়ের নামে ইস্যু হয়েছে। আমরা ভূমিহীন। বিপিএল তালিকাভুক্ত। ওই জমি ছাড়া আর কোনও জমি নেই। তিন পুরুষ ধরে আমরা ওই জমির দখলদার। তারপরও কীভাবে একজন বয়স্ক বিধবা মহিলার নামে পাট্টা ইস্যু হয়ে গেল। তরুণবাবু একজন অবস্থাপন্ন ব্যক্তি। ওই জমির পাশে তিনি দু’বিঘা চাষযোগ্য জমি কিনেছেন। তারপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি খাস জমির পাট্টা নিজের মায়ের নামে ইস্যু করে নিয়েছেন। আমরা ওই পাট্টা বাতিলের দাবিতে এসডিও-র শরণাপন্ন হয়েছি। একজন বয়স্ক মহিলার নামে কেন পাট্টা ইস্যু হল তার তদন্তও দাবি করেছি।
এনিয়ে তরুণবাবু বলেন, পাট্টার বিষয়টি নিয়ে স্বপন মাইতিদের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধান সূত্র বের করা হবে। কেউ কেউ এই বিষয়টাকে ইস্যু করতে চাইছে। এটা তেমন গুরুতর কিছু নয়।