• আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ, পাচারের নয়া প্যাকেজিং হার মানাবে ‘পুষ্পা’কেও
    বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: গোরু থেকে গাঁজা— প্যাকেজিং কৌশল দেখে ভিরমি খাবার জোগাড় পুলিসের। কীভাবে চোরাই সামগ্রী পাচার করতে হয়, তা নিয়ে পুষ্পা সিনেমা সুপারহিট। কিন্তু গোরু ও গাঁজা পাচারের আধুনিক কৌশল হার মানাবে পুষ্পা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। পুলিস ও আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, দামি গাড়ির জানালাগুলিতে কালো কাচ লাগিয়ে ভেতর থেকে তা প্লাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই সিট খুলে দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে চোরাই গোরু। চালকের পিছনের দিকও এমন ভাবে প্লাই দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে যেন গাড়িতে তৈরি হচ্ছে ‘গোশালা’। মঙ্গলবার রাতে এমনই একটি গাড়ি ধরছে বরাকর পুলিস ফাঁড়ির আধিকারিকরা।


    শুধু গোরু নয়, গাঁজা পাচারের কৌশলটিও নজরকাড়া। বস্তা বস্তা গাঁজা বিশেষ কম্প্রেসর মেশিন নিয়ে সংকুচিত করে দেওয়া হচ্ছে। তারপর বিশেষ টেপ দিয়ে মোড়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে সুগন্ধি যাতে গাঁজার গন্ধটুকুও বাইরে বেরিয়ে না আসে। সাম্প্রতিকালে পুলিস কয়েকটি গাঁজা পাচার রুখে এই বিষয়টি জানতে পেরেছে। পাচারের এই নিত্যনতুন কৌশলের ছক ভাঙাই এখন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


    ডিসি ভিজি সতীশ পশুমূর্তি বলেন, কুলটি থানার পুলিস বরাকরে একটি গাড়ি আটক করে। সেখানে দেখা যায় চারটি গোরু ভেতরে রয়েছে। বিহারের গয়ার এক বাসিন্দা গ্রেপ্তার হয়েছে। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কুলটি থানার সাঁকতোড়িয়া বরাকর রাস্তার উপর আকস্মিক নাকা শুরু করেছিল বরাকর পুলিস ফাঁড়ির পুলিস। নাকা দেখেই একটি দামি চারচাকা গাড়িটি নাকা ভেঙে  দ্রুত চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিস গাড়িটি ধরতে সফল হয়। আটক করা হয় গয়ার সন্দীপ পাসওয়ানকে। গাড়িটির ভেতরে তল্লাশি করতে গিয়ে চমকে ওঠেন পুলিস কর্মীরাও। গাড়ি ভেতর থেকে প্লাই দিয়ে রীতিমতো চেম্বার গড়া হয়েছে। চালক ও তাঁর পাশে সিটটি রয়েছে। সেই অংশটির পরই একটি প্লাই দিয়ে বাকি অংশকে আলাদা করা হয়েছে। পিছনের কাচ সহ গাড়ির জানলার কাচগুলি প্লাই দিয়ে ঢাকা। সেখানেই রয়েছে চারটি গোরু। গোরুগুলিকে উদ্ধার করে চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দামি গাড়িতে করে গোরু পাচারের খবর পুলিসের কাছে এসেছিল। যদিও হাতে নাতে এই দামি গাড়িতে গোরু পাচার প্রথম ধরল পুলিস। পুলিস কর্মীদের একাংশের দাবি, এই পদ্ধতিতে গোরু পাচার হলে আটকানো সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। শিল্পাঞ্চলে হাজার হাজার গাড়ি নানা রাস্তা দিয়ে ছুটছে। প্রতিটি গাড়িকে খুঁটিয়ে দেখা অসম্ভব। 


    অন্যদিকে পাণ্ডবেশ্বরের পর এবার দুর্গাপুরের কোকওভেন থানাও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে। দু’ক্ষেত্রে গাঁজার প্যাকেজিং নজরকাড়া। জানা গিয়েছে, এই প্যাকেজিং এতটাই মজবুত আদালতের সামনে প্যা঩কেজিং কেটে গাঁজা প্রকাশ্যে আনতে হিমশিম খায় পুলিস। জানা গিয়েছিল, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েকটি বিশেষ জায়গায় এই প্যাকেজিং হয়। বস্তা বস্তা গাঁজা কম্প্রেসর মেশিন দিয়ে ছোট আকারের কঠিন বস্তুর রূপ দেয়। 


    মেশিন দিয়েই বিশেষ টেপ আটকে পুরো প্যাকেটটিকে এমনভাবে মোড়া হয় যে, গাঁজার গন্ধটুকুও বাইরে আসে না। পাচারকারীরা নিজের পিঠ ব্যাগে নিয়ে তা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ বিশেষ নজরদারি চালিয়ে পর্দা ফাঁস করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ধরা পড়ছে না বলে সূত্রের দাবি। আসানসোল আদালতের মাদক বিষয়ক মামলার সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন, এটি অতি সংগঠিত অপরাধ। গাঁজাকে যেভাবে প্যাকিং করা হচ্ছে, তা মেশিনের সাহায্য ছাড়া অসম্ভব। 
  • Link to this news (বর্তমান)