রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, রানিবাঁধ: ঝাড়গ্রাম সীমান্তে রয়্যাল বেঙ্গলের দেখা মিলতেই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাঘমামা জেলার সীমানা ছাড়িয়ে যে কোনও সময় বাঁকুড়ায় ঢুকে পড়তে পারে বলে ঝাড়গ্রাম লাগোয়া রানিবাঁধ, বারিকুল, রাইপুর, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা। এর আগেও ঝাড়গ্রাম থেকে দীর্ঘ জঙ্গল পথ অতিক্রম করে বাঁকুড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল একটি বাঘ। বছর সাতেক আগে লালগড় ঘেঁষা সিমলাপালের পীঠাবাকড়া গ্রামে রাতের অন্ধকারে বাঘটি হানা দিয়েছিল। পরদিন সকালে বাসিন্দারা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ, নখের আঁচর লক্ষ্য করে পুলিস ও বনদপ্তরে খবর দেন। তার কিছুদিন পর ঝাড়গ্রামে একদল মানুষ বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল।
এবারও পড়শি জেলায় বাঘের আনাগোনার খবরে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের ঘুম ছুটেছে। অনেকেই ভয়ে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। সন্ধ্যা নামলেই লালগড়, বেলপাহাড়ী ঘেঁষা গ্রামগুলির বাসিন্দারা বাড়িঘরে খিল আঁটছেন। রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন রানিবাঁধ, বারিকুল ও রাইপুর থানা এলাকার একাধিক গ্রামে ঘুরে ওই চিত্র চোখে পড়ে। বাসিন্দাদের চোখেমুখেও আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
বাঁকুড়া দক্ষিণের ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, ঝাড়গ্রামে বাঘ ঢুকতেই আমরা লাগোয়া রেঞ্জ অফিসগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছি। রেঞ্জাররা দিনরাত সজাগ রয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত বাঘটি আমাদের বনবিভাগে প্রবেশ করেনি।
উল্লেখ্য, বহুদিন আগে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও অবিভক্ত মেদিনীপুরের জঙ্গলে বাঘের যাতায়াত ছিল। ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার জঙ্গল থেকে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ও ঝাড়গ্রাম হয়ে বাঘ বাঁকুড়ায় আসত বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তবে এখন মাঝেমধ্যে চিতাবাঘের দেখা মিললেও রয়্যাল বেঙ্গলের সন্ধান জঙ্গলমহলে পাওয়া যায় না। কয়েকবছর আগে একটি বাঘ জঙ্গলমহলে এসে ‘খুন’ হওয়ার পর সকলেই সজাগ হয়ে গিয়েছে।
বারিকুল থানার শুড়িতাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তপন পাল, রানিবাঁধে কোড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জলেশ্বর কিস্কু বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে ঝাড়গ্রামের দূরত্ব বেশি নয়। দুই জেলার সীমানায় দীর্ঘ ও ঘন জঙ্গল রয়েছে। এক-দু’কিমির মধ্যে থাকা বেলপাহাড়ী সীমানা থেকে জঙ্গল হয়ে বাঘের ঝিলিমিলিতে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না। এর আগেও ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ায় বাঘ এসেছিল। ফলে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। বনদপ্তর, পুলিস ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।
তাঁরা আরও বলেন, বাঁকুড়ার জঙ্গলে হায়না, নেকড়ে বাঘ, শিয়াল, হাতির উপদ্রব রয়েছে। ছোট থেকেই আমরা ওইসব বন্যপশুর সঙ্গে যুঝে এসেছি। কিন্তু, এ যে একেবারে বনের রাজা বাঘমশাই। তার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা আর কার আছে বলুন!
কলকাতার বেহালা থেকে ঝিলিমিলিতে বেড়াতে আসা কণিকা সরকার, অম্বরীশ বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, জঙ্গলমহলে এসে ঝাড়গ্রামে বাঘ ঢোকার বিষয়টি জেনেছি। গাইড ও স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের সতর্ক করছেন। সূর্য ডোবার আগেই হোটেলে ঢুকে পড়ব। - প্রতীকী চিত্র