নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: ইনিংসের শুরুতেই চালিয়ে খেলছে শীত। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মতো দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। রীতিমতো কাঁপছে জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। ওই দুই জেলায় তাপমাত্রার পারদ ক্রমশই নিম্নমুখী। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করছে উত্তুরে হাওয়াও। চলতি মরশুমে পুরুলিয়ায় শীতলতম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রের খবর, এতদিন ধরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশাপাশেই ঘোরাফেরা করছিল। বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামে আট ডিগ্রিতে। যা এই মরশুমের শীতলতম বলে দাবি করা হচ্ছে। ঠান্ডায় পুরুলিয়াকে টক্কর দিচ্ছে বাঁকুড়া। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাঁকুড়া শহর সহ জেলার সর্বত্র এদিন কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়। যেভাবে পারদ পতন হচ্ছে, তাতে কার্যত জবুথবু দুই জেলার মানুষ। জাঁকিয়ে শীতের পাশাপাশি সকালের দিকে কুয়াশা থাকছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে গত কয়েকদিন ধরেই সেইভাবে প্রাতঃভ্রমণকারীদের দেখা মিলছে না। যাঁরা বেরিয়েওছিলেন, তাঁদের আপদমস্তক ঢাকা ছিল গরম পোশাকে। সন্ধ্যার পর থেকে বাজারহাটে ভিড়ও অনেক কম। গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যা সাতটার পর থেকেই দোকানপাট বন্ধ করতে শুরু করে দিচ্ছেন। এদিন বাজারে দেশি মাছের জোগানও ছিল কম। মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড শীতে মাছ ধরতে বেরচ্ছেন না জেলেরা। তবে চালানি মাছের জোগান ছিল।
দুই জেলাতেই শীতের চেনা ছবি চোখে পড়েছে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বেলে হাত-পা সেঁকেছে মানুষ। অযোধ্যা পাহাড়ে বরফ পড়ার মিমে ছেয়ে গিয়েছে সমাজ মাধ্যম। অন্যদিকে, শীতের মরশুমের শুরুতেই দুই জেলাতেই ঢল নেমেছে পর্যটকের। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকেও পর্যটক আসছে পুরুলিয়ায়। বৃহস্পতিবারও অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, মারবেল লেক, উসুল ডুংরি, পাখিপাহাড় সহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আজ শুক্রবার থেকে সেই ভিড় আরও বাড়বে। অধিকাংশ হোটেলই বুক হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে দুই বর্ধমানে দাপট দেখাতে শুরু করেছে শীত। খনি অঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশি ছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৮ ডিগ্রিতে নেমে আসে। তবে পূর্ব বর্ধমানে তাপমাত্রা একটু বেশি ছিল। দুপুরেও শীতের পোশাক পড়ে ঘুরতে হয়েছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে তাপমাত্র আরও কমতে থাকে। তবে কুয়াশার দাপট ততটা ছিল না। আগামী দিনে কুয়াশা বাড়তে পারে ধরে নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে। এই সময় দুর্ঘটনা বেড়ে যায়, তাই গাড়ি চালকদের চক্ষু পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শক্তিগড়, গলসি, জামালপুর থানা এলাকায় রাস্তার দু’ পাশে যাতে গাড়ি না দাঁড়াতে পারে তারজন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বীরভূমেও জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল এই মরশুমের শীতলতম দিন। শান্তিনিকেতন আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তুরে হাওয়া বয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রার কমার আরও সম্ভবনা রয়েছে। ইলেকট্রনিক্সের দোকানগুলিতে রুম হিটারের চাহিদা বেড়েছে।