নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: খড়্গপুর রেল স্টেশনে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছিল দেড় বছর বয়সি এক শিশুকন্যা। তখন তাঁর মুখে চোখে বিষন্নতার ছাপ। খিদের জ্বালায় মাঝে মধ্যেই কেঁদে উঠছিল সে। পরে অসহায় শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে রেল পুলিস, প্রশাসনের আধিকারিকরা। ভালোবেসে তার নাম রাখা হয় অষ্টমী। বৃহস্পতিবার সেই শিশুকন্যাকে দত্তক নিলেন ইতালির এক দম্পতি। শিশুকন্যা নতুন জীবন ফিরে পাওয়ায় খুশি প্রশাসনের আধিকারিকরাও। এদিন দত্তক নেওয়াকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ শিশু উদ্যানে জেলা সমাজ কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে জেলা শিশু সুরক্ষা বিভাগ এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ডেভেলপমেন্ট) কেম্পা হোনাইয়া, জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায় সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, অপর একটি শিশুকে দত্তক নিয়েছেন রাজপুরের এক দম্পতি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম রাখা হয় নীলাভ। জানা গিয়েছে, প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় খুশি দম্পতিরা। এদিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ডেভেলপমেন্ট) কেম্পা হোনাইয়া বলেন, দু’টি শিশুকে দু’টি পরিবার পেল। এটা খুবই আনন্দের। অসহায় শিশুদের পাশে প্রশাসন সর্বদা থাকবে। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দত্তক নেওয়ার অনুষ্ঠাকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। অরবিন্দ শিশু উদ্যানের একটি অংশ ঢেলে সাজা হয়। দত্তক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দত্তক সংক্রান্ত সচেতনতা শিবির ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিশু দত্তক নেওয়া একাধিক দম্পতি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। এরপর প্রশাসনের আধিকারিকরা দুই দম্পতির হাতে দত্তক নেওয়া সন্তানদের তুলে দেন। ইতালি থেকে আসা প্যাসকেল সিয়ানো একজন সেনাকর্তা। আর আন্না পালোম্বা ইতালি দেশের একজন নাম করা বিউটিশিয়ান। তাঁদের কোনও সন্তান নেই। তিন বছর আগে সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য তাঁরা আবেদন করেন। আন্তর্জাতিক অ্যাডপ্টেশন এজেন্সি ‘আফা’-র মাধ্যমে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে দত্তক দেওয়া হয় অষ্টমীকে। এদিন ওই দম্পতি বলেন, সন্তান দত্তক পেয়ে আমরা ভীষণ খুশি। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আমরা আপ্লুত। দারুণ এক অভিজ্ঞতা হল। অপরদিকে, কলকাতার কাছে রাজপুরের বাসিন্দা অভিজিৎ দাস ও অনুভারানি দাস সন্তান দত্তক নিলেন। ২০২১ সালে সন্তান দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে তাঁরা আবেদন করেন অনলাইনে। এদিন তাঁরা নীলাভকে দত্তক নিল। ব্যবসায়ী এই দম্পতি বলেন, আজকে স্বপ্নপূরণ হল। সন্তানকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।
এদিন মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ভীষণ সুন্দর একটি মুহূর্ত। শিশুরা নতুন পরিবার পাচ্ছে। ওদের জন্য শুভকামনা রইল।-নিজস্ব চিত্র