সায়ন চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: মুঠোফোনে আটকে শৈশব। তাকে বইমুখো করা কি চাট্টিখানি কথা! দু’প্রজন্ম আগের বাবা-মায়েদের অবশ্য এই ঝামেলা পোহাতে হয়নি। চাপে পড়ে স্কুলের বইতে চোখ রাখলেও গল্পের বই! নৈব নৈব চ। সেই অসাধ্য সাধনে বাচ্চাদের নিয়ে উত্তরবঙ্গ বইমেলায় হাজির হয়েছেন বাবা-মায়েরা। বৃহস্পতিবার ছিল উত্তরবঙ্গ বইমেলার সপ্তম দিন। সপ্তমীই বটে! দুপুরে প্রায় ফাঁকা মেলা সন্ধ্যার পর কার্যত কালো মাথার ভিড়ে পূর্ণ। আর সেখানে লক্ষ্যনীয় কচিকাঁচাদের আনাগোনা।
পঞ্চম শ্রেণির আকাশদীপ শর্মা বইমেলার একটি স্টলে ঢুকে কৌতূহলী চোখে কিছু খোঁজার চেষ্টায় ব্যস্ত। কী বই খুঁজছ? জিজ্ঞেস করতেই মানব শরীর সংক্রান্ত বই আকারে ইঙ্গিতে বোঝাল, এটাই তার পছন্দ। পাশে দাঁড়ানো হায়দরপাড়া নিবাসী মা চৈতালী শর্মা বললেন, স্কুল বা পড়ার বাইরে ছেলে মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকে। কিন্তু এই বই ওদের মোবাইলের আসক্তি কাটানোর মাধ্যম হতে পারে। এই কারণেই মেলায় নিয়ে এসেছি। গল্পের বই দেখুক, চিনুক। দোকানের কাউন্টারে প্রবীণদের তুলনায় কচিকাঁচাদের ভিড়ই লক্ষ্যনীয়। ছোটদের বইয়ের বিল করতে ব্যস্ত ওই স্টলের তরফে অনিমেষ গাইন বলেন, বইমেলা তো ওদেরই উত্সব। এই সাত দিন ছোটদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি উত্সাহ দেখলাম।
অন্য স্টলে তখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ভূতের গল্পের বই দেখছে সারদা শিশু তীর্থের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র পিনাক চক্রবর্তী। ছেলের জন্য বই কিনতে কিনতে দেশবন্ধুপাড়ার প্রীতম চক্রবর্তী বলেন, অবসর সময় মোবাইলে বাচ্চাদের শৈশব আটকে থাকছে। গল্পের বই পড়ার যে একটা আলাদা আনন্দ আছে সেটা বোঝানোর জন্যই ওকে বইমেলায় নিয়ে এলাম।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তেই মেলায় কালো মাথার সংখ্যাও হুহু করে বেড়ে গেল। অনেকে অবশ্য একে সান্ধ্য মেলা বলে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না। ২০ টাকা টিকিটের দাম নিয়ে দু’একজন প্রশ্ন করলেন বটে, তবে মেলায় ঘুরে তারা তৃপ্ত। ভিড় দেখে হাসি চওড়া মেলা কমিটিরও। ৪২তম উত্তরবঙ্গ বইমেলা কমিটিক আহ্বায়ক মধুসূদন সেন ২০ টাকা টিকিটের দামের ব্যাপারটিকে খুব একটা আমল দেননি। তাঁর অকপট বক্তব্য, গত ছ’দিনে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর তিন দিন মেলা। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ছোটরাই আসছে। স্কুল পড়ুয়াদের জন্য টিকিটের হাফ দাম রেখেছি। ১৫টি স্কুলের বাচ্চাদেরও বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। ওদের বইমুখো করার লড়াইটা আমাদের সবার।