নিজের জমির পাট দিয়েই কার্পেট তৈরি করেন ইটাহারের বৃদ্ধা, ঘুরেছেন লন্ডন
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: নিজের জমিতে নিজেই পাট চাষ করেন। সেই পাট দিয়ে কার্পেট বানিয়ে প্লেনে চড়েছেন, বিদেশ ঘুরে এসেছেন ইটাহারের চৌদোয়া গ্রামের বৃদ্ধা মালন সরকার। শিলিগুড়ির বিশ্ববাংলা শিল্পীহাটে উত্তরবঙ্গ হস্তশিল্প মেলায় তাঁর সেই শিল্পকর্ম নিয়ে এসেছেন ৬৯ বছরের মালনদেবী। পাটের কার্পেট তৈরির পাশাপাশি কলাগাছ ও আনারস পাতা থেকে সুতো বের করে টেবিল ম্যাট বানিয়ে সাড়া ফেলেন উত্তর দিনাজুপুর জেলার এই বৃদ্ধা শিল্পী।
বৃহস্পতিবার হস্তশিল্প মেলায় নিজের দেকান সাজাতে সাজাতে তিনি বলেন, মা কে দেখে ছোটবেলায় কার্পেট বানানো শিখেছি। আমাদের গ্রামে প্রতি বাড়িতেই এই কার্পেট তৈরি হয়। আমাদের গ্রামের এক দিদি শিল্পীদের একজোট করে আকর্ষণীয় কার্পেট তৈরি ও তার বিক্রির ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। আমার কাজে খুশি হয়ে তিনি আমাকে বিমানে করে লন্ডন, বাংলাদেশ ঘুরিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার কাজ দেখেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বছর মেলার আয়োজন শুরু করার পর হাতের কাজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে মালনদেবী বলেন, আমার স্বামী বাঁশ ও কাঠের মুখোশ তৈরি করতেন। গত বছর মারা গিয়েছেন। আমি আমার ছেলের বউকে নিয়ে এই কার্পেট তৈরি করি। নিজেই পাট চাষ করি। পাটের আঁশ রং ও ব্লিচ করে কার্পেট বানাই।
এর আগে মালনদেবী শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ট্রেড ফেয়ারে এসেছেন। বিশ্ববাংলা শিল্পীহাটে উত্তরবঙ্গ হস্তশিল্প মেলায় এবারই প্রথম এসেছেন। এদিন মেলার দ্বিতীয় দিনে তাঁর দোকানে উৎসাহী মানুষের ভিড় তাঁকে ভালো ব্যবসা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পাটের চাহিদা বরাবরের, তবে গত কয়েক বছর ধরে উলের কার্পেটের চাহিদা বেড়েছে। তাই এখন পাটের সঙ্গে উলের কার্পেট তৈরি করছি।
তবে সব মেলায় তিনি যেতে পারেন না। মালনদেবী বলেন, সব মেলায় গেলে কার্পেট তৈরি করব কখন? বাড়িতে এসেই বেশিরভাগ মহাজন কার্পেট নিয়ে যান। যদিও তাঁরা দাম অনেক পরে দেন। এছাড়া গ্রামের হাটেহাটে আমার ছেলের বউ কার্পেট বিক্রি করে। ভালোই উপার্জন হয়। তাতে ভালোমতোই সংসার চলে। আমার ছেলে এই কাজে আসেনি। ছেলে পেশায় ড্রাইভার। - নিজস্ব চিত্র।