• উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসকদের হাতযশ, নতুন করে হাঁটতে শিখছেন ৬৫’র গৌরীদেবী
    বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জটিল অস্ত্রোপচারে নতুন করে হাঁটতে শিখছেন ৬৫ বছরের গৌরীদেবী। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া এনজেপি’র শান্তি পাড়ার বাসিন্দা গৌরীদেবীর দু’টি হাঁটু ক্ষয়ে গিয়েছিল। ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। হাঁটতে পারতেন না। গত শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকরা সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সফল অস্ত্রোপচার করে তাঁর দু’টি হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছেন।


    চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ সোরেনের নেতৃত্বে এই জটিল অস্ত্রোপচার হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই চিকিৎসক কৌস্তভ চক্রবর্তী ও অর্ণব কুমার ঘোষ। বৃহস্পতিবার কৌস্তভ চক্রবর্তী বলেন, গৌরীদেবীর দু’টি হাঁটু ক্ষয়ে গিয়েছিল। সেকারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না। যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছিলেন। আমাদের এখানে আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় দু’টি হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে হবে। শনিবার তাঁর দুটি হাঁটু সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাকে এখন ধরে ধরে একটু হাঁটানো হচ্ছে। শীঘ্রই তিনি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবেন। এর আগে একসঙ্গে এখানে দু’টি হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়নি।


    বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিমেল অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে গৌরীদেবী এখানকার চিকিৎসকদের প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর মেয়ে সোনালি রঙদার বলেন, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঁটুর ব্যথায় মা কষ্ট পাচ্ছিলেন। অনেক ডাক্তার ওষুধ করেও ব্যথা কিছুতেই কমেনি। যতদিন গিয়েছে পরিস্থিতি জটিল হয়ে হাঁটার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিলেন মা। গৌরীদেবী বলেন, বাইরে ডাক্তার দেখানোর পর হাঁটু অপারেশনের কথা বলে। সকলেই বাইরে যেতে বলেছিল। কিন্তু বিশাল খরচ। তবু কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভেবেছিলাম নিজের শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে চিকিৎসা করতে যাব। কিন্তু সেই জমি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যেত তার থেকেও বেশি খরচ চিকিৎসায়। ভেবেছিলাম কষ্ট করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। গরিব মানুষ, অত টাকা পাব কোথায়। 


    এক প্রতিবেশীর কথাতেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল হাসপাতালে আসেন গৌরীদেবী। তিনি বলেন, খুব ভয়ে ছিলাম। এখানকার ডাক্তারবাবুরা সারাক্ষণ সাহস জুগিয়ে আমার অপারেশন করেন। বাইরে এই অপারেশন করতে ছয় লক্ষ টাকা লাগত।  সেখানে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আমাকে একটি পয়সাও খরচ করতে হয়নি। আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে এত খরচ করে বাইরে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এখানে যেভাবে ডাক্তারবাবুরা আমাকে নতুন জীবন দিলেন তাঁদের কথা আমি চিরদিন মনে রাখব। আবার ভালো মতো হাঁটতে পারব। এখানকার ডাক্তারবাবুরা  সত্যিই ভগবান।
  • Link to this news (বর্তমান)