নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুন, মাত্র ৫৯ দিনেই দোষী সাব্যস্ত দুই অভিযুক্ত
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ফরাক্কার নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মাত্র ৫৯ দিনের মাথায় দোষীসাব্যস্ত হল দুই অভিযুক্ত। আজ শুক্রবার সাজা ঘোষণা করবে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত। অভিযুক্ত দীনবন্ধু হালদার ও শুভজিৎ হালদারের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে অপহরণ, গণধর্ষণ করে খুন ও খুনের পর তথ্য প্রমাণ লোপাটের একাধিক ধারায় দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের দু’জনেরই বাড়ি ফরাক্কা থানার রেলকলোনি এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় শুনানি শেষে দু’জনকেই দোষীসাব্যস্ত করেন।
সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক তাদের দোষীসাব্যস্ত করেছেন। এই মামলায় রাজ্যে প্রথম ড্রোন ম্যাপিং করা হয়। শুক্রবার সাজা ঘোষণা করবে আদালত। অন্তত চারটি ধারায় মৃত্যুর সাজার বিধান রয়েছে। জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে শিশুর মা বলেন, ওরা আমার দুধের শিশুর সঙ্গে পৈশাচিক আচরণের করে তারপর তাকে নৃশংস ভাবে খুন করে। আমার কোল খালি করেছে। যাতে আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়, আর কোনও শিশুর সঙ্গে এমন দূর্ব্যবহার করতে না পারে ওরা। তাই ওদের কঠোর শাস্তি দিক আদালত।
ফরাক্কার এসডিপিও আমিনুল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিস সুপারের নির্দেশ মত আমরা গুরুত্ব সহকারে এই মামলার তদন্ত শুরু করি। প্রথমেই একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও একজনের যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে। তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ একত্রিত করেছি। খুব কম সময়ের মধ্যেই আদালতে সেগুলি পেশ করা হয়। ২১ দিনের মাথায় এই মামলায় চার্জশিট জমা করেছি আমরা। দোষীরা উপযুক্ত সাজা পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
এবছরের দুর্গাপুজোয় ওই নাবালিকা দিল্লি থেকে ফরাক্কায় মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে। বিজয়া দশমীর সকালে নয় বছরের ওই নাবালিকা বাড়ির বাইরে সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে খেলা করছিল। তখন দীনবন্ধু তাকে ফুল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডাকে। তাকে ধর্ষণ করে সে। নাবালিকা যাতে চিৎকার করতে না পারে, তারজন্য তার মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়। ধর্ষণের পর তার মাথা মেঝেতে বারবার ঠুকে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। প্রমাণ লোপাট করতে তাকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ঘরের কোনে আলনার তলায় লুকিয়ে রাখে। এদিকে শিশুটি দীর্ঘক্ষণ ঘরে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করেন। দীনবন্ধুই তাকে প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে যায় বলে তার খেলার সঙ্গীদের কাছে জানতে পারে পরিবারের লোকজন। এরপর দীনবন্ধুকে শিশুর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে সে অস্বীকার করে। ফের দীনবন্ধুর বাড়িতে গেলে বাইরে থেকে দরজায় শিকল দেওয়া অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। এদিকে সন্ধ্যা নাগাদ স্থানীয় লোকজন দীনবন্ধুকে ঘরের দরজা খুলতে বাধ্য করে। তার ঘরে তল্লাশি চালায় এলাকাবাসী। অবশেষে ঘরের এক কোনে নাবালিকার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। অভিযুক্ত যুবকের হাত পা বেঁধে গণধোলাই দেন স্থানীয়রা। তারপর তাকে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।