বিদ্বেষের বিষবাষ্পের মধ্যেই দুই বাংলায় বিজয় সরকারের লেখা নিয়ে চর্চা বাড়ছে
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ‘তুমি জান না রে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা…’ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সম্প্রতি বিষিয়ে ওঠা সম্পর্কে মলম দিতে পারে বিজয় সরকারের গান। বাংলাদেশের নামী লোকগীতিশিল্পী তথা কবির গুণমুগ্ধরা এমনই মনে করছেন। ‘বিজয় পাগলে’র লেখা গান, কবিতা এরাজ্যের সিলেবাসেও বহুলভাবে ঢুকছে। সম্প্রীতির আবহ তৈরিতে এগুলি ভূমিকা নিতে পারে বলে তাঁদের আশা।
ইংরেজিতে এমএ কোর্স চালুর অনুমোদন পেয়েছে নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ। সেই সিলেবাস ও পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে কলেজই। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানেই তা তৈরি হয়েছে। সেখানে ইংরেজিতে বিজয় সরকারের লেখা গান, কবিতা অনুবাদ করে পাঠ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। বুধবার এ নিয়ে একটি কর্মশালাও ছিল কলেজে। তাতে বক্তব্য রেখেছেন কবির গুণমুগ্ধ, সংস্কৃতিকর্মী তথা কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি রতনকুমার নন্দী। তিনি বলেন, সিলেবাসে বিজয় সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করায় সংশ্লিষ্ট কমিটিকে ধন্যবাদ। দুই বাংলা ঘুরে তাঁকে নিয়ে গবেষণা করে গিয়েছেন মার্কিন গবেষকরাও। তাহলে আমরা কেন পারব না? ইংরেজিতে উচ্চশিক্ষা মানেই শুধুমাত্র শেক্সপিয়ার, বোদলেয়ার বা মিল্টন পড়া নয়, শিকড়টাকেও মনে রাখতে হবে।
পারিবারিক উপাধি ‘বৈরাগী’ ঝেড়ে ফেলে অধিকারী পদবি নেন নড়াইলের এই কবিয়াল। পরে অবশ্য সরকার পদবিতেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে যান। ফোনে বিজয় সরকারের ছেলে কাজল অধিকারী বলেন, বিজয় সরকারকে জনপ্রিয় করেছেন মুসলমানরাই। মহসিন হোসেন তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে না লিখলে এই পর্যায়ে তিনি পরিচিতি পেতেন কি না সন্দেহ। এই উত্তাল পরিস্থিতিতেও ৪ ডিসেম্বর কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় সাড়ম্বরেই। সেখান থেকে একুশে পদক পাওয়া এই কবিকে উচ্চতর সম্মান প্রদর্শনের দাবিও উঠেছে মুসলমানদের তরফেই। স্থানীয় প্রশাসন, সরকার সবারই পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। দুই বাংলাতেই দেখেছি, বাবার গান শুনে বিভোর হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছে হিন্দু-মুসলমান। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন হতেই পারে বাবার গানে।
কাজী নজরুল ইসলাম, জসিমউদ্দিন, আব্বাসউদ্দিন আহমেদ এমনকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও প্রশংসা পেয়েছেন বিজয় সরকার। কৃষ্ণভজনা থেকে ইসলামি গান, সবই চুটিয়ে গেয়েছেন। কাজলবাবুর কথায়, রবীন্দ্রনাথের ধাঁচে ‘তুমি’ করে গান লিখতেন বাবা। সেটা ঈশ্বর বা মনের মানুষ যে কেউ হতে পারেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও লোকসংস্কৃতি বিভাগের সিলেবাসে বিজয় সরকার রয়েছেন।
স্কুলশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, অষ্টম শ্রেণিতে কবির লেখা ‘আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে’ কবিতাটি পাঠ্য হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির শারীরশিক্ষা বইতে রয়েছে ‘তোরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ শোন রে শিশুর দল’ গানটি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা অ্যাকাডেমি, সর্বত্রই বাড়ছে বিজয় সরকারের চর্চা। বাংলাদেশে সম্প্রতি বেড়ে চলা রবীন্দ্রবিদ্বেষের মধ্যে এটা একেবারে অন্যচিত্র। প্রসঙ্গত, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে এসে বেলুড়ে মেয়ের বাড়িতে প্রয়াত হন কবি। তাঁর ছেলেদের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার কেউটিয়ায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানেও উত্তরোত্তর বাড়ছে বিজয়-চর্চা।