নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: মুখের ভাষায় প্রকাশ করা যায় না মনের কথা। শোনাও যায় না পৃথিবীর সুন্দর মুহূর্তের শব্দ। মূক ও বধির হয়েই ছোটবেলা থেকে কেটেছে জীবন। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশের সব অভিব্যক্তি এক হয়ে ধরা দিয়েছিল বরফি সিনেমার মার্ফি আর ঝিলমিলের। সেলুলয়েডের গল্প বাস্তবেও পরিণতি পায়। জীবনে চলার পথেই এভাবেই যেন একে অপরকে খুঁজে পেল হুগলির শ্রীরামপুরের ইন্দ্রনীল আর কলকাতার মহুয়া। গত মঙ্গলবার সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন দু’জনে। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফিরতেই নবযুগলকে দেখতে ভিড় করলেন স্থানীয়রা।
শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজারের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়। মাত্র ৮ মাস বয়সেই ভুল চিকিৎসার কারণে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। কথা বলাও শিখতে পারেননি। পরিবার বহু চেষ্টা করেও ছেলেকে স্বাভাবিক করতে পারেনি। কিন্তু জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে লড়াই করে খেলাধুলোর পাশাপাশি জীবনের মূল স্রোতেও আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই সাবলীল ইন্দ্রনীল। শ্রীরামপুর কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত তিনি। অন্যদিকে, কলকাতার বাসিন্দা মহুয়া। তিনিও ছোটবেলা থেকে মুখ ও বধির। কাজের সূত্রেই বেশ কয়েক মাস আগে পরিচয় হয় দু’জনের। মুখে নয়, দু’জনেরই মনের ভাব প্রকাশ পেয়েছিল চোখের ভাষায়। তবে এই প্রেম অধ্যায়ের অন্যতম যোগসূত্র ইন্দ্রনীলের বোন গীতাঞ্জলি। হয়তো বোনই বুঝতে পারে দাদার মনের কথা। প্রেম থেকে চারহাত এক হওয়া পর্যন্ত, সবটাই হয়েছে তাঁর মাধ্যমেই। গীতাঞ্জলি বলেন, ‘আমরা সবাই খুব খুশি যে ওরা দুজন এক হতে পারল। খুব ভালো থাকুক ওরা।’ মঙ্গলবার কলকাতায় বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান মিটিয়ে শ্রীরামপুরের বাড়িতে ফিরেছেন সদ্য বিবাহিত যুগল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মুখে ভালোবাসি বললেও কত মানুষ মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। ওদের ভালোবাসার এই পরিণতি সত্যিই দৃষ্টান্ত।