নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: শীতকালে আলো পড়তে শুরু করে বিকেল সাড়ে চারটের পর। তারপর নামে সন্ধ্যা। কিন্তু আমডাঙা, বারাসত বা হাবড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় তার আগেই অন্ধকার নেমে আসে। ধোঁয়ায় প্রায় ঢাকা পড়ে সূর্য। কৃষকরা তখন খেতে জমে থাকা খড়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আর গলগল করে বেরতে থাকে ধোঁয়া। তা দিগ্বিদিক ঢেকে দেয়। কালো ধোঁয়ার আস্তরণে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। দমবন্ধ অবস্থা স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাঁচি-কাশি নিত্যকার সঙ্গী। প্রবল দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত। শিশু ও প্রবীণদের কষ্ট সবথেকে বেশি। কৃষকরা এই খড় পোড়ানোকে বলেন ‘নাড়া পোড়ানো’।
একসময় বাড়িতে ধান নিয়ে গিয়ে ঝাড়ার কাজ হতো। ফলে খড় চাষের জমিতে পড়ে থাকত না। এখন শ্রমিক কম। খরচ ও সময় বাঁচাতে বেশিরভাগ কাজ হয় যন্ত্রে। ফলে লম্বা লম্বা খড়ের টুকরো রয়ে যায় জমিতেই। পরবর্তী পর্যায়ের চাষের আগে জমি দ্রুত সাফ করতে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন অধিকাংশ কৃষক। দাউদাউ আগুনে বর্জ্য খড় পোড়ে বটে তবে বাড়তে থাকে দূষণ। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাড়া পোড়ানোর ফলে তৈরি হয় বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড। তা মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর পাশাপাশি উদ্বেগের কারণ আরও আছে। জমিতে আগুন জ্বলার ফলে চাষের কাজে উপকারী পোকামাকড়, জীবাণু বা অণুখাদ্য পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জমির উর্বরতা কমে। যদিও এসব সতর্কবার্তায় কান দেন না কৃষকরা। ফলে আমডাঙা থেকে হাবড়া বা মিনাখাঁ ও হাড়োয়ায় হয়েই চলেছে নাড়া পোড়ানো।
প্রসঙ্গত দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণে আদালতও হরিয়ানায় নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিল। তারপরও জেশজুড়ে এই প্রবণতায় রাশ টানা সম্ভভ হয়নি। আশিস দাস নামে আমডাঙার সন্তোষপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘মানুষের শরীর ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে।’ হাবড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সুনীল দে বলেন, ‘চারটে বাজলেই অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশার মতো পরিস্থিতি।’ বারাসতের চিকিৎসক বিবর্তন সাহা বলেন, ‘করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কৃষকদের আরও সচেতন হওয়ার দরকার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।’ কৃষিদপ্তরের এক জেলা আধিকারিক বলেন, ‘নাড়া পুড়িয়ে দূষণ ছড়ালে দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেছি। কিন্তু বন্ধ হয়নি। আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’