• বাতাসে মিশছে বিষবাষ্প! উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গী শহরতলির কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে কলকাতা
    বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও কলকাতা: কলকাতা শহরের আশপাশ এলাকায় শীত পড়লেই ‘ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ড’। নিউটাউনের ফাঁকা ঘাসজমিতে মূলত আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আকাশ ঢেকে যায় ঘন কালো ধোঁয়ায়। দূষণের মাত্রা চড়চড় করে বাড়ে। অভিযোগ, ফাঁকা জমির ঝোপঝাড় সাফ করতে সস্তায় কাজ সারার জন্য আগুন লাগিয়ে দেন অনেকে। পরিবেশবিদদের বক্তব্য, শীতের সময় উত্তুরে হাওয়ায় মিশে নিউটাউনের ধোঁয়া কলকাতার আকাশে প্রবেশ করে। আর ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে বায়ুদূষণের সূচক। 


    দেখা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে ক্রমেই খারাপ হচ্ছে কলকাতার বায়ুদূষণের সূচক। বুধবার কলকাতার সূচক ছিল ১৬১। বৃহস্পতিবার বেড়ে হয়ে গিয়েছে ১৭৫। পরিবেশের দূষণ বৃদ্ধির হাজারো কারণ রয়েছে। তার সঙ্গে কয়েক বছর ধরে যুক্ত হয়েছে নিউটাউনের এই ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ড। এর পাশাপাশি শহরতলির চাষের জমি সাফ করতেও আগুন লাগান কৃষকরা। তা থেকেও দূষণ মারাত্মক পরিমাণে ছড়ায়। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে। কখনওই এই ধরনের কার্যকলাপ কাম্য নয়। হাওয়ার সঙ্গে ওই ধোঁয়া শহরে প্রবেশ করলে খারাপ তো হবেই।’  


    নিউটাউনে ফি বছর সমস্যায় ভোগেন শহরের আবাসিকরা। এবছরও শীত পড়তেই ফাঁকা জমিতে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়েছে। আট ডিসেম্বর উপনগরীর একটি পাঁচতারা হোটেলের অদূরে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এ কাজ রুখতে গত বছর থেকে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। জমিতে নতুন রাস্তা তৈরি, ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালানো হয়। মনিটারিং টিমও রয়েছে। কিন্তু তারপরও আগুন লাগানো থামানো যায়নি। আবাসিকদের অভিযোগ, ‘কর্তৃপক্ষের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তাই একই ঘটনা বারবার ঘটছে।’


    নিউটাউনে এখনও কয়েকশো বিঘা ফাঁকা জমি পড়ে। বহু জমি বিভিন্ন সংস্থার নামে আছে। অনেক জায়গায় জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। প্রতিবছরই এই ধরনের জমিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। খালি জমিতে ঘাস-গুল্ম জন্মায়। শুকনো পাতা জমে। ফলে আগুন ধরলে তা বড় চেহারা নেয়। আকাশ কালো করে ধোঁয়া দেখা যায়। তারপর ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে নিউটাউনে। বাতাসে ভর করে তা পৌঁছয় কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলেও। আর বাতাসে বাড়তেই থাকে দূষণের মাত্রা। 


    বছর দু’য়েক আগে মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়ামের পিছনের একটি ফাঁকা জমিতে অগ্নিকাণ্ড হয়। জমির মাটি ভিজে থাকার জন্য দমকল পৌঁছতে পর্যন্ত পারেনি। তারপর জলের ট্যাঙ্ক ও দমকল যাতে পৌঁছতে পারে সে জন্য জমিতে ইট দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি হয়। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও এনকেডিএ’র টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘোরে। দমকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখেও হয় কাজ। বিভিন্ন এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক রাখা যাতে ছোট আকারের আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলা যায়। তা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আটকানো যাচ্ছে না।
  • Link to this news (বর্তমান)