সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: বাজারে ডিমের দাম আকাশছোঁয়া। কিন্তু, সরকারি বরাদ্দ মাত্র সাড়ে ছ’টাকা। তাই আজ, শুক্রবার থেকে বাঁকুড়ার ৫ হাজার ৭৩৯টি কেন্দ্রে ডিম রান্না বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। এতে প্রায় চার লক্ষ শিশু ও উপভোক্তা মা পরিপূরক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। এবিষয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসন সহ দপ্তরের জেলা আধিকারিকের কাছে চিঠি জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে সব্জি ও জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। কর্মীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতি পিস ডিমের সরকারি বরাদ্দ সাড়ে ছ’টাকা। কিন্তু, বাজারে সাড়ে ৭টাকা থেকে আট টাকা দরে তা কিনতে হচ্ছে। এমনকী ২০১২ সালে শেষবার সব্জি ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। তারপর অনেকটাই দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভীষণ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, এনিয়ে তাঁরা দপ্তরে বারবার জানিয়েছেন। কেবলই আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা আজ থেকে জেলাজুড়ে প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না করলেও শিশুদের পাতে ডিম দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের বাঁকুড়া জেলার ডিপিও নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা তাঁদের দাবি দাওয়া লিখিতভাবে জানিয়েছেন। বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি রাজ্যের দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শিখা নিয়োগী বলেন, আমরা যৎসামান্য সাম্মানিক পাই। কিন্তু, সরকারি বরাদ্দের চেয়ে ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের বর্তমানে গাঁটের কড়ি খরচা করে কেন্দ্র চালাতে হচ্ছে।
সংগঠনের অপর এক আহ্বায়ক রিঙ্কু চন্দ বলেন, কেন্দ্রে সব্জি ও জ্বালানি বাবদ বরাদ্দও ১২বছর ধরে বাড়ানো হয়নি। কিন্তু, ওই সবের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে আমরা ভীষণ বিপাকে পড়েছি। দপ্তরে বারবার জানানো হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কার্যকর করা হয়নি। সেই জন্য আমরা শুক্রবার থেকে শিশু, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের পাতে ডিম দিতে পারব না বলে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে দপ্তরের আধিকারিক সহ জেলা পরিষদেও লিখিতভাবে জানিয়েছি।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলায় বর্তমানে ৫৭৩৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে গর্ভবতী, প্রসূতি মা সহ শূন্য থেকে পাঁচবছরের শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ও পরিপূরক পুষ্টিযুক্ত খাবার পায়। কেন্দ্রে সপ্তাহে তিনদিন ভাত ও ডিম এবং বাকি তিনদিন খিচুড়ি ও ডিম দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অপুষ্ট শিশুদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের জন্য বিশেষ পুষ্টিযুক্ত খাবারেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় চার লক্ষ উপভোক্তা তাতে উপকৃত হয়। কিন্তু, বর্তমানে ডিম খুচরো বাজারে সাড়ে সাত থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা কিনতে গিয়েই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাথায় হাত পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তাঁরা কেন্দ্র কীভাবে চালাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। দপ্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই যতদিন পর্যন্ত বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিমের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে, ততদিন তাঁরা শিশুদের পাতে ডিম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।