‘বিপজ্জনক’ বাড়িতে প্রাণ হাতে করে চলছে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, হলদিয়া: পিডব্লুডি ‘বিপজ্জনক বিল্ডিং’ ঘোষণার পরও সেখানে চিকিৎসা চালাতে বাধ্য হচ্ছে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রাণ হাতে নিয়েই কাজ করেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিরুপায় রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। কারণ বিকল্প হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা এখনও অথৈ জলে। নবনির্মিত কোভিড বিল্ডিংয়ে হাসপাতালের একাংশ কোনওরকমে স্থানান্তরিত হলেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি। বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে ইমারজেন্সি, অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম, প্রসূতি ওয়ার্ড, পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড, আইসিইউ, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং ক্লিনিক্যাল ল্যাবগুলি। এগুলি কোথায় কীভাবে স্থানান্তরিত হবে তা নিয়ে গত দু’ বছর ধরে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মহকুমা প্রশাসনের। কিন্তু বিকল্পের সন্ধান মেলেনি। জরাজীর্ণ হাসপাতাল দেখে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর বার বার সতর্ক করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতিতে পুরনো পরিকাঠামো ভেঙে নতুন হাসপাতাল বিল্ডিং তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। গত এক বছর ধরে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর পিডব্লুডিকে হাসপাতালের প্ল্যান এস্টিমেটের জন্য একাধিকবার বলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। সকলেই এবিষয়ে উদ্বিগ্ন। পিডব্লুডির গয়ংগচ্ছ মনোভাবে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যদপ্তর।
জানা গিয়েছে, নির্মাণের পর ১৯৯১ সালে মহকুমা হাসপাতাল বিল্ডিং হস্তান্তর করে পিডব্লুডি। কিন্তু পিডব্লুডির ব্লু-বুকে হাসপাতালের নাম না থাকায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হতো না বলে অভিযোগ। এনিয়ে পিডব্লুডিকে একাধিকবার চিঠিও লেখা হয়। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির অভিযোগ, পিডব্লুডি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে হাসপাতালের এই দুর্দশা হতো না। মাত্র তিন দশকের মধ্যেই এত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হতে বসেছে। হাসপাতালের ডিজাইনে ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ। এখন হাসপাতাল ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় নেই বলছেন ইঞ্জিনিয়াররা। পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়াররা বার বার জানাচ্ছেন, হলদিয়া হাসপাতাল বিল্ডিং ব্যবহারযোগ্য নয়। যে কোনও সময়ে বড় বিপদ ঘটতে পারে। প্রায়ই চাঙড় খুলে পড়ার ঘটনা ঘটে। সবাই খুবই উদ্বিগ্ন। তবে রাতারাতি হাসপাতাল তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু পিডব্লুডি প্ল্যান এস্টিমেট তৈরির কাজে ভীষণ ঢিলেমি করছে। একাজ না হলে বাজেট করা সম্ভব হচ্ছে না স্বাস্থ্যদপ্তরের। পিডব্লুডির কাজকর্ম নিয়ে সবাই হতাশ। জেলা প্রশাসনও পিডব্লুডির উপর ক্ষুব্ধ। তবে পিডব্লুডি এবিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এখন মূল চিন্তা অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম, প্রসূতি বিভাগ ও পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড সরানো নিয়ে। বিকল্প জায়গার সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটছে সবাই। হাসপাতাল সুপার সুভাষচন্দ্র মাহাত বলেন, পুরনো বিল্ডিং লাগোয়া চারতলা কোভিড বিল্ডিংয়ে আউটডোর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু ওই বিল্ডিংয়ে জায়গা সঙ্কুলান হচ্ছে না। প্রতিদিন ১০০০-১২০০ রোগী সামাল দেওয়ার মতো জায়গা নেই। কোনও রকমে বেড শেয়ারিং করে রোগী রাখতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ঝামেলা হচ্ছে। তবে এখনই অপারেশন থিয়েটার বা লেবার রুম সরানোর জায়গা খুঁজছি সবাই। এজন্য হাসপাতালের পাশে নির্মীয়মাণ বার্ন ইউনিটে বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি। চিকিৎসক ও নার্সরা বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবাই কাজ করছে। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডে একাধিকবার মা ও সদ্যোজাত শিশুর বেডের পাশে ছাদের চাঙড় খুলে পড়েছে। হলদিয়ার মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, আইওসি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে হাসপাতালে একটি আলাদা বার্ন ইউনিট তৈরি করছে। সেখানে অপারেশন থিয়েটার ও লেবার রুম তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই বিল্ডিংয়ে আরও একতলা বাড়ানোর জন্য জেলাশাসকের মাধ্যমে আইওসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। আইওসি ওই প্রস্তাবে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে।-নিজস্ব চিত্র