চন্দ্রকোণায় ভাঙা সেতু থেকে পড়ে জখম যুবক, ব্রিজ পুড়িয়ে প্রতিবাদ
বর্তমান | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: ভগ্নপ্রায় কাঠের সেতুটির দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। ভাঙা সেতু থেকে পড়ে যুবক জখম হওয়ার পরই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বুধবার রাতে চন্দ্রকোণা-১ ও চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের সংযোগকারী মথুরাপুর-কদমতলার কাঠের সেতুর একাংশ জ্বালিয়ে দিলেন। ফলে ওই রাত থেকেই দু’টি ব্লকের ২০-২৫টি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। কাঠের সেতু পুড়িয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চন্দ্রকোণা-২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হীরালাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দেড়-দু’বছর সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করার খুবই সমস্যা হচ্ছিল। মানুষজন প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েই হয়তো ওই কাজ করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি জেলা পরিষদকে দিয়ে ওই সেতুটি সংস্কার করার ব্যবস্থা করতে।’
২০১১ সালে বাম জমানার শেষের দিকে চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের মথুরাপুর এবং চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের কদমতলা মাঝে একটি কাঠের সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩৫০ ফুট লম্বা এবং আট ফুট চওড়া ওই কাঠের সেতু তৈরির কাজ বাম আমলে শুরু হলেও রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৩ সালে সেটির কাজ শেষ হয়। কাঠের সেতু তৈরি হতেই কৃষিপ্রধান দুই ব্লকের প্রায় ২০-২৫টি গ্রামের বাসিন্দা খুবই উপকৃত হন।
পালংপুর, তেনপুর, পরিজপুর, বেড়াবেড়িয়া, গাংচা, কুলদহ, মথুরাপুর, বসন্তপুর, হালিশহর, হিজলি সহ গ্রামগুলির বাসিন্দারা এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে যেতে পারতেন। চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের বান্দিপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই ক্ষীরপাই শহর ও হাসপাতালটি খুবই সামনে হয়। কদমতলার বিকাশ সামন্ত, বিশ্বজিৎ পাল প্রমুখ বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন বাজার, চিকিৎসা, ব্যাঙ্ক সব কিছুর জন্যই ব্রিজ পেরিয়ে ক্ষীরপাই শহরে যাই। সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বিপজ্জনক ও চলাচলের অনুপযুক্ত হওয়ায় আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।’
সেতুটি জরাজীর্ণ হলেও বাসিন্দাদের বাধ্য হয়ে পারাপার করতে হতো। পাশাপাশি অবিলম্বে সেতুটি সংস্কার করার জন্য প্রশাসনের কাছেও দাবি রেখে আসছেন তাঁরা। দু’ সপ্তাহ আগে ওই সেতুর উপর দিয়ে বাইকে যাতায়াত করার সময় আলুর বস্তা সমেত বাইক নিয়ে শিলাবতীতে পড়ে গুরুতর জখম হন বেড়াবেড়িয়ার এক যুবক। বর্তমানে তাঁর শরীরের এক দিকটা পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। তিনি আর চলাফেরাও করতে পারেন না। বুধবার রাতে ওই সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় আরও এক যুবক বাইক নিয়ে নদীতে পড়ে যান। তারপরই ক্ষিপ্ত হয়ে বাসিন্দারা রাতেই সেতুর একাংশের পাটাতন খুলে সেই কাঠ সেতুর উপরেই জ্বালিয়ে দিয়ে সেতু সারানোর দাবি তোলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দু’টি ব্লকের সীমানায় ওই সেতুটি পড়ে যাওয়ার কারণে কোনও ব্লকই সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের বান্দিপুর-১ গ্রামপঞ্চায়েত কখনও কখনও বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে সেতু সংস্কারের কাজ সাময়িকভাবে করলেও চন্দ্রকোণা-১ ব্লক ওই সেতু সংস্কারের বিষয়টিতে কোনও রকম আমল দেয়নি বলে অভিযোগ। হীরালালবাবুও মনে করেন, দু’টি ব্লকে একযোগে জেলা প্রশাসনকে চিঠি চাপাটি করলে সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু এনিয়ে চন্দ্রকোণা-২ ব্লক আগ্রহী হলেও চন্দ্রকোণা-১ ব্লক প্রশাসন খুবই উদাসীন। চন্দ্রকোণা-১ বিডিও কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘ওই সেতুটি আমাদের ব্লকের এক্তিয়ারের মধ্যে রয়েছে কিনা জানতে হবে।’ -নিজস্ব চিত্র