৩ মাসেও হল না চার্জশিট, আদালতে বেআব্রু সিবিআইয়ের ব্যর্থতা,অভয়া কাণ্ডে সন্দীপ-অভিজিতের জামিন
বর্তমান | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৯০ দিন অতিক্রান্ত! তিন মাসেও আর জি কর কাণ্ডে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিতে পারল না সিবিআই। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনে তথ্য-প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের মামলায় শিয়ালদহ আদালতে ব্রেআব্রু কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের ব্যর্থতা। ফলে শুক্রবার সহজেই জামিন পেয়ে গেলেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। সেটাও মাত্র দু’হাজার টাকার বন্ডে। শর্ত একটাই, জামিন পর্বে তলব করামাত্র হাজিরা দিতে হবে দু’জনকেই। তবে সন্দীপ মুক্তি পাচ্ছেন না। কারণ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাই এখনও জেলে থাকতে হবে তাঁকে। অভিজিৎ অবশ্য সন্ধ্যায় আদালত থেকে সোজা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
দু’দিন আগেই আর জি কর মামলা ছেড়ে দেন ‘অভয়া’র পরিবারের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। তারপরই এদিন সন্দীপ-অভিজিতের জামিনে ভেঙে পড়েছেন ‘জাস্টিস চাই’ আন্দোলনকারীরা। হতাশ ‘অভয়া’র মা-বাবাও। সিবিআইয়ের তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন। অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, তাহলে কি কলকাতা পুলিসের তদন্তই সঠিক ছিল? সন্দীপ ঘোষের জামিনের খবর শুনে ‘অভয়া’র মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বলার মতো কোনও কথা নেই। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে না পারায় ওঁদের জামিন হয়ে গেল। আর কী করার আছে! আমি তো আর সিবিআই নই, তাহলে কাজটা করে দিতাম।’
পাঁচদিনের জেল হেফাজত শেষে এদিন শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয় সন্দীপ-অভিজিৎকে। সওয়ালের শুরুতেই সিবিআইয়ের আইনজীবী দীপক পোরিয়া বলেন, দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। তবে তাঁরা চার্জশিট জমা দিচ্ছেন না। হেফাজতেরও আবেদন করছেন না। এক্ষেত্রে আদালতই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। তদন্তকারী অফিসারও আদালতে জানান, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তাই তাঁরা চার্জশিট জমা দিচ্ছেন না। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা তখন বলেন, দু’জনের বিরুদ্ধে এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারের পর ৯০ দিন পেরিয়েছে। এখনও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয়নি সিবিআই। শুধু বারবার বলছে, এখনও তদন্ত চলছে। এর অর্থ মক্কেলদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। তাই জামিনের আর্জি জানানো হচ্ছে। সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
যদিও তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিবিআইয়ের এক কর্তা জানিয়েছেন, জামিন হয়ে গিয়েছে বলে তদন্ত শেষ, এমনটা নয়। দ্রুত গতিতে তদন্ত চলছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে। এখনও প্রয়োজনীয় নথিপত্র হাতে আসেনি বলে এদিন তা দেওয়া যায়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্টে তদন্ত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি তুলে ধরতেই দুই অভিযুক্তকে তড়িঘড়ি হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সন্দীপ-অভিজিৎকে। তাঁদের জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল একটাই, ঘটনার পর দু’জনের একাধিকবার কথা হয়েছে। কীভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হবে তাই নিয়ে কথাবার্তা চলেছে। সেব্যাপারে মোবাইলের ফরেন্সিক রিপোর্ট রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এমনকী হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিকৃত করা, দেরিতে এফআইআর দায়েরের অভিযোগও তোলেন এজেন্সির অফিসাররা। কিন্তু ৯০ দিন ধরে তার কোনও প্রমাণ জোগাড় করে উঠে পারেননি। তাতেই সামনে চলে এল সিবিআইয়ের ব্যর্থতা।