• ইউপিএসসির শীর্ষে দুই বঙ্গতনয়, সিঞ্চন ও বিল্টুর সাফল্যে শুভেচ্ছাবার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার
    আনন্দবাজার | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ইউপিএসসির ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিলেন দুই বঙ্গতনয়। শুক্রবার ফলপ্রকাশ করেছে ইউপিএসসি। তাতে মেধাতালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের বাসিন্দা সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বিল্টু মাজি। এক জন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী। অন্য জনের শিক্ষাজীবনেও রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শের প্রভাব। দু’জনেরই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। লক্ষ্য অটুট রেখে হার না-মানা জেদে শেষে সাফল্য পেলেন দুই বঙ্গতনয়। তাঁদের সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সিঞ্চনের বাড়ি আসানসোল ইসমাইল মাদার টেরিজা সরণিতে। পড়াশোনা আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনে। বাবা প্রদীপ অধিকারী আসানসোল মাইন্‌স বোর্ড অফ হেল্‌থের কর্মী। বেতন খুব বেশি নয়, কোনও রকমে সংসার চলে। পড়াশোনায় শুরু থেকেই ভাল। রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে খবর, স্কুলজীবন থেকেই মেধাবী ছাত্র বলে তাঁকে চিনতেন সবাই। ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও বসেছিলেন। মেডিক্যালের প্রবেশিকায় র‌্যাঙ্ক করেন ১৬৮। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকায় সপ্তম হন। তবে সিঞ্চনের পাখির চোখ ছিল স্ট্যাটিস্টিক্‌স। পড়াশোনাও সেই মতোই এগোতে থাকে।

    প্রথমে স্ট্যাটিস্টিক্‌সে স্নাতক হন। পরে কলকাতার আইএসআই থেকে স্ট্যাটিস্টিক্‌স নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন। গত চার বছরে সমাজমাধ্যমও অকারণে ঘাঁটাঘাঁটি বন্ধ করে দেন। ইউপিএসসিকে পাখির চোখ করে মনোনিবেশ করেন। সিঞ্চনের সাফল্যের পর খুশি পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা চাইছেন, পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার মতো, প্রশাসনিক দায়িত্বে গিয়েও যেন সিঞ্চন এক নম্বর হন।

    সিঞ্চনের মতো বিল্টুও আউশগ্রামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। বাবা পেশায় কৃষক। দু’বিঘা জমি রয়েছে। তার ভরসাতেই একটা সময়ে সংসার চলে যায় তাঁদের। সেই সময়ে খুব একটা সচ্ছল নয় বিল্টুদের পরিবারও। তাঁর বাবা জয়দেব মাজিকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য ধারদেনা করতে হয়েছিল। ওই ঋণের জন্য পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি আরও খারাপ হয়ে যায়। সেই সময়ে বিল্টু একটি সরকারি চাকরি জোগাড় করেন। বিএসসি পাশ করার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে গ্রামীণ ডাকঘরে শাখা পোস্টমাস্টার হিসাবে কাজে যোগ দেন। এখন তিনি বীরভূমের রূপপুরে একটি ডাকঘরে কর্মরত।

    ডাকঘরের চাকরি করতে করতেই ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। একাধিক বার হোঁচট খেয়েছেন। কিন্তু উঠে দাঁড়িয়ে আবার চেষ্টা শুরু করেছেন। ২০২১ সালে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসেছিলেন। তিন নম্বরের জন্য আটকে যান প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়। তার পর আর ডব্লিউবিসিএসের জন্য চেষ্টা করেননি। ২০২২ সালে আইএএস পরীক্ষায় বসেন। প্রিলিমিলারিতে পাশ করলেও, মৌখিক পরীক্ষায় আটকে যান। ১৬ নম্বর কম পান তিনি। এর পর ২০২৩ সালে আবারও ওই পরীক্ষায় বসেন। সেই বারও দু’নম্বর কম পান। এ বার শেষে ইউপিএসসির ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়েছেন বিল্টু। শুধু সফল নন, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তাঁর কথায়, “স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। স্বামীজির সেই বাণী আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। অবশেষে সাফল্য পেয়েছি।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)