• গল্ফগ্রিনকাণ্ড: শ্যালিকাকে ‘ভালবাসতেন’, ফোন ‘ব্লক’ করাতেই খুন করে তিন টুকরো করেন জামাইবাবু!
    আনন্দবাজার | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • গল্ফগ্রিনের মহিলা খুনের ঘটনায় মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুক্রবার পুলিশ গল্ফগ্রিন এলাকা থেকে প্লাস্টিকে মোড়া একটি কাটা মুন্ডু উদ্ধার করে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে শনিবার মূল অভিযুক্ত আতিউর লস্কর নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত সম্পর্কে মৃতার জামাইবাবু ছিলেন। কেন নিজের শ্যালিকাকে এ ভাবে খুন করে টুকরো টুকরো করলেন অভিযুক্ত তা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, শ্যালিকাকে ভালবাসতেন অভিযুক্ত। কিন্তু বার বার প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পরেও রাজি হননি ওই মহিলা। বচসার কারণে জামাইবাবুকে ফোনে ‘ব্লক’ করে দেন তিনি। সেই রাগেই শ্যালিকাকে খুন করে তিন টুকরো করেন অভিযুক্ত!

    শুক্রবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার গল্ফগ্রিন এলাকায় একটি বহুতল আবাসনের পিছনে আবর্জনার স্তূপ থেকে এক মহিলার কাটা মুন্ডু উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মহিলার পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন দিকে অনুসন্ধান শুরু করেন তদন্তকারীরা। মহিলার ছবি বিভিন্ন জায়গায় দেখান, সেই সূত্র ধরেই মৃতার পরিচয় জানতে পারেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, মহিলার নাম খাতেজা বিবি। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা ছিলেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারেন মৃতা গল্ফগ্রিন এলাকায় পরিচারিকার কাজ করতেন। রোজ সকালে বাসে করে আসতেন। আবার সন্ধ্যার পর ফিরে যেতেন বাড়ি। তাঁর সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি থাকতেন বলেও পুলিশ জানতে পারে। সেই সূত্র ধরেই আতিউরকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছেন আতিউর। কেন তিনি খুন করলেন, তা-ও জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।

    জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছেন, তিনি পেশায় রঙের মিস্ত্রী। মৃতা এবং তিনি সম্পর্কে শ্যালিকা-জামাইবাবু। রোজ সকালে দু’জনে একসঙ্গে কলকাতায় আসতেন। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর খাতেজা আড়াই বছর ধরে সন্তানদের নিয়ে একাই থাকতেন। একই এলাকায় থাকতেন তাঁর দিদি, জামাইবাবু। ধীরে ধীরে শ্যালিকার প্রতি আতিউরের মনে ভালবাসার অনুভূতি তৈরি হয়। খাতেজাকে সে কথা জানানও তিনি। কিন্তু আতিউরের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না ওই মহিলা। বেশ কয়েক মাস ধরে এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল।

    রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও দু’জনে কলকাতায় আসেন। তার পর যে যাঁর মতো কাজে যান। বিকেলে আতিউর শ্যালিকাকে জানান, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ি ফিরবেন। পুলিশের অনুমান, কেন ওই মহিলা আতিউরের মোবাইল নম্বর ‘ব্লক’ করে দেন, তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। সেই বচসা থেকেই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। আতিউর জানিয়েছেন, প্রথমে খাতেজাতে তিনি ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তাতে তিনি আহত হন। তার পর শ্বাসরোধ করে খুন করেন খাতেজাকে। তার পর কোনও এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে খাতেজার দেহ তিন টুকরো করেন আতিউর। সঙ্গে থাকা বস্তায় ভরে দেহ ফেলে দেন।

    আতিউর পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেননি। শুক্রবার সকালে যখন গল্ফগ্রিন এলাকা থেকে খাতেজার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ, তখন কয়েকশো মিটার দূরে কাজ করছিলেন আতিউর। রাতে বাড়ি ফেরেন। শনিবার বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

    এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মৃতার পরিচয় জানতে তাঁর ছবি নিয়ে বিভিন্ন দোকানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ছোট ছোট দল গঠন করে এই কাজ করা হয়। কয়েক জন দোকানদার ছবি দেখে মৃতাকে চিনতে পারেন। তাঁরাই জানান ওই মহিলার সঙ্গে আরও এক জন থাকতেন। আমরা কয়েক জনকে সন্দেহ করেছিলাম। তার পর পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে নিজের বাড়ি থেকে অভিযুক্ত আতিউরকে গ্রেফতার করা হয়।’’ তবে এখনও পর্যন্ত খাতেজার দেহ কাটার অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। কিছু অসঙ্গতি মিলেছে অভিযুক্তের কথায়। পুলিশ এই সব দিক খতিয়ে দেখছেন বলে জানান বিদিশা।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)