২০২৪-এ নতুন সূচনা হলেও এই বন্ধুত্বের বীজ বোনা হয় ১৪ বছর আগে। বাংলায় ব্রায়ান অ্যাডামসের প্রথম কনসার্টের অন্যতম আয়োজক কিঞ্জল ভট্টাচার্য তারও কয়েক বছর আগে থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শুরু করেছেন। তাঁদের উদ্যোগে দুই পড়শি দেশের বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে ভারতের একাধিক জায়গায় অনুষ্ঠান-সফর শুরু করেছিল পাকিস্তানের রক ব্যান্ড ‘রেথ’। ছ’বছর ধরে এ দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠান করে ‘রেথ’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ছাত্র সংসদের ডাকে ২০১৩-র ‘সংস্কৃতি’তেও পারফর্ম করেছিল তারা। তখন আনন্দবাজারকেই এক সাক্ষাৎকারে ব্যান্ড সদস্যেরা জানান, সঙ্গীত নিয়ে সীমান্তের দু’পারের যুবসমাজের উন্মাদনা একই রকম নিখাদ।
এক দশক আগের সেই সফরের সূত্রে কিঞ্জলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয় ‘রেথ’ ব্যান্ডের ম্যানেজার তথা ব্যান্ডের অন্যতম গিটারিস্ট সানি ঘনশ্যামের। দুই দেশের সৌভ্রাত্রের বার্তার সেই সুর-সফরের অনুষ্ঠানগুলি ‘রেথ’ শেষ করত ‘বন্দেমাতরম’ গেয়ে। কিঞ্জল জানান, ২০১৬-এ অসমের ডিব্রুগড়ে অনুষ্ঠান চলাকালীন হামলা হয় ব্যান্ডের মুখ্য গায়ক ওয়াজি ফারুকির উপরে। তার পরেই নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে ফিরে যেতে হয় ওয়াজি, সানিদের।
পরবর্তী কালে দু’দেশের বৈদেশিক সম্পর্কের টানাপড়েনের ছাপ পড়ে সংস্কৃতি জগতেও। ভারতে অনুষ্ঠান করতে, এখানকার ছবিতে অভিনয় করতে কার্যত দেখাই মেলে না পাকিস্তানের শিল্পীদের। তবে বন্ধুত্বে ইতি পড়েনি কিঞ্জল, সানিদের। ভারতে না হলেও ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে ভারতের বাইরে ‘রেথ’কে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন কিঞ্জল। গিয়েছেন শ্রীলঙ্কায়। কোভিড-কালে লকডাউনের সময় দু’দেশের শিল্পীরা মিলে অনলাইনে অনুষ্ঠান করেছেন। তবে গত রবিবার ব্রায়ান অ্যাডামসের কনসার্ট ঘিরে ফের তাঁদের বন্ধুত্বের নতুন সূচনা হল।
কিঞ্জল জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে সানি বাণিজ্য-অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বোর্ডের সদস্য হন। আর বছর দুয়েক আগে তিনি বিয়ে করেন গুরুগ্রামের বাসিন্দা, ভারতে থাকা তাঁর প্রেমিকাকে। স্ত্রী ভারতীয় হওয়ার সুবাদে ভিসা পেয়ে ভারতে এসেছেন সানি। কারণও সেই ব্রায়ান অ্যাডামস। সানির কথায়, “বহু দিন আগে থেকে কিঞ্জল বলত, ও এক দিন ব্রায়ান অ্যাডামসকে নিয়ে আসবে। তখন অনেকে হাসত। কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হল। আমিও সশরীর থাকতে পারলাম সেই মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে। আমাদের বন্ধুত্বের যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।”
কিঞ্জল জানাচ্ছেন, ব্রায়ানকে কলকাতায় আনার এই উদ্যোগ তাঁর বহু পুরনো বন্ধুকে মিলিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান থেকে যেমন সানি এসেছিলেন, তেমনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছিলেন আরও অনেকে। কিঞ্জলের কথায়, “সকলে মিলে চেষ্টা করেছে এই অনুষ্ঠান যাতে সফল হয়। তাই এই কনসার্ট পুরনো বন্ধুদের পুনর্মিলন হয়ে রইল। সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার।”