চার মাস আগের আন্দোলনের পরেও আর জি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার অধরাই। ঘটনাটি নিয়ে বহু ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। এর পাশাপাশি, রাজ্যে পর পর ঘটে চলেছে একাধিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। ফলে প্রশ্ন, নিরাপত্তার, মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের, সমান অধিকারের যে দাবি তোলা হয়েছিল, তা পূরণ কবে হবে? এ দিন মঞ্চ থেকে সেই সব দাবি ফের তুললেন কর্পোরেট কর্মী, গৃহ পরিচারিকা, আইনজীবী, প্লাস্টিক কারখানার কর্মী, যৌনপল্লির বাসিন্দা কিশোরী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী, নাট্যকর্মী থেকে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার নানা মানুষ। সংগঠিত হোক বা অসংগঠিত— কোনও জায়গাতেই যে মেয়েরা, প্রান্তিক মানুষেরা নিরাপদ নন, সে সবই উঠে এল তাঁদের বক্তব্যে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানানোর কমিটি বহু ক্ষেত্রেই রয়েছে খাতায়-কলমে। হেনস্থার অভিযোগ জানাতে যে আঞ্চলিক কমিটি তৈরির কথা, তা-ও নেই। এ নিয়ে সচেতনতাও খুবই কম।
প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের ক্ষেত্রে সেই অধিকারের দাবি আরও সঙ্কীর্ণ। তাঁদের জন্য নেই শৌচাগার, নেই হাসপাতালে নির্দিষ্ট শয্যা। এমনকি, আইনও যেন তাঁদের ব্রাত্যই করে রেখেছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে রূপান্তরকামী নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মী ও শিল্পী অনুরাগ মৈত্রেয়ী বললেন, ‘‘অনেকেই আমাদের যৌন আক্রমণকারী হিসাবে ভাবেন। কারও কাছে আমরা কেবল ‘অ্যাকাডেমিক’ কৌতূহলের বস্তু। আমাদের একটাই দাবি, মানুষের মতো মানুষের মর্যাদা দেওয়া হোক।’’
মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা, ডলি বণিকের কথায় উঠে এল গৃহ পরিচারিকাদের প্রতি অসম্মানের কথা। ‘ঝি’ বলে সম্বোধন কিংবা ছুটি পেতে সমস্যার কথা উল্লেখ করে ডলির প্রশ্ন, ‘‘কবে সব কাজ সমান চোখে দেখা হবে?’’ হাওড়ার প্লাস্টিক কারখানার কর্মী নির্মলা দত্ত জানালেন, একটানা ১২ ঘণ্টা পরিশ্রমের কথা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে বাড়তি রোজগার তো দূর, কখনও সারা মাস হাড়ভাঙা খেটেও ঠিক সময়ে মাইনে জোটে না বলে জানালেন তিনি। কালীঘাটের যৌনপল্লিতে বেড়ে ওঠা কিশোরীর কথায় উঠে এল পাচার হয়ে আসা, বিক্রি করে দেওয়া মেয়েদের কথা। এমনকি, স্বামী বা সঙ্গী জোর করে যৌন কাজে নামিয়ে দিচ্ছে যে মেয়েদের, তাঁদের কথা। গত অগস্টে আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে পথে নেমেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু তাঁদের অধিকারের কথা? সেটা কারা বলবে? মঞ্চ থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় দশম শ্রেণির কিশোরী।
আর জি করের ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি-সহ কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত বিশ্রামাগার, ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি ও লোকাল কমপ্লেন্টস কমিটি তৈরি, প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের জন্য শৌচাগার তৈরির মতো একগুচ্ছ দাবি তোলা হয় এ দিনের সমাবেশ থেকে। ওঠে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ ধ্বনিও।