দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির বাজারে মাত্র ১ টাকায় চপ বিক্রি করেন সিউড়ির কোমা গ্রামের দিলীপ
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, সাঁইথিয়া: দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির বাজারেও মাত্র ১ টাকায় মিলছে চপ! দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছররেও বেশি সময় ধরে চপের দাম ১ টাকা রেখেছেন সিউড়ির কোমা গ্রামের দিলীপ দে। সকাল থেকে সন্ধ্যা তাঁর নিরামিষ চপের দোকানের সামনে ভিড় জমান ক্রেতারা। যেখানে সব্জি, তেল সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া। সেখানে এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারেও সিউড়ির দু’নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত কোমা গ্রামের দিলীপবাবু প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চপ বিক্রি করেছেন। আগে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সায় তারপর এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে প্রায় ১৫ বছরে চপের দাম বাড়িয়ে করেছেন মাত্র ১ টাকা। যেখানে অনান্য গ্রামের তেলেভাজার দোকানে ৫-৭ টাকার নীচে কোনও তেলেভাজাই পাওয়া যায় না, সেখানে এত কম দামে কীভাবে দিলীপবাবু চপ বিক্রির করছেন, তার রহস্য জানতে গ্রামবাসীর আগ্রহের শেষ নেই। প্রভাস মাল, অনিতা ও অঙ্কুররা বলেন, আমরা দিনমজুর লোক। কষ্টের মাধ্যমে সংসার চালাতে হয়। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির বাজারে আমাদের কার্যত নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। তারপর যেটুকু পয়সা বাঁচে তাতে খাবার কিনে সংসারে দেওয়ার মতো টাকা থাকে না। কিন্তু এই দিলীপবাবুর মতো লোকেরা সত্যিই আমাদের কথা ভাবেন। যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সিউড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে কোমা গ্রাম। কোমা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই ছোট্ট তাঁর তেলেভাজার দোকান। ভোর হতেই দোকান খুলে চপের মশলা প্রস্তুত করেন তিনি। তাঁর এই এক টাকার চপ কিনতে ভিড় জমান কোমা, জানুরি, আড্ডা, ভগীরথপুর সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন। শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে প্রতিনিয়ত খাবারের দাম বাড়িয়ে চলেছেন, অথচ শহর থেকে অনেকটাই দূরে কোমা গ্রামের এক তেলেভাজা বিক্রেতা এই মূল্যে চপ বিক্রি করে চলেছেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। যা বলা যায় সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সিউড়ির এক সব্জি বিক্রেতা পূর্ণচন্দ্র সাউ বলেন, আলু প্রায় ২৬-২৮ টাকা, টোম্যাটো প্রায় ৪০, পেঁয়াজ প্রায় ৫০ টাকার মতো বিক্রি করছি। এছাড়াও বাজারে প্রতিদিন সব্জির দাম কখনও বাড়ছে আবার কখনও কমছে। দিলীপবাবু বলেন, আমি দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তেলেভাজার ব্যবসা করছি। আগে ২৫ পয়সা তারপর ৫০ পয়সায় তেলেভাজা বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন দ্রব্যমূল্যের কারণে চপের দাম ১ টাকা করতে বাধ্য হয়েছি। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। এছাড়াও তেলেভাজার দোকানের পাশাপাশি ছোট্ট একটি মুদিখানা দোকান চালাই। ওই দোকানের পাশাপাশি বিকেলে বেশি পরিমাণে চপ তৈরি করি। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে আমারও নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। কিন্তু মা যেহেতু বলেছেন এই মূল্যে চপ বিক্রি করতে তাই আজও ওই দামেই চপ বিক্রি করি। সামনে স্কুল রয়েছে পড়ুয়াদের ২ টাকায় ২টি চপ দিতে পারি। দিনমজুররা কাজ শেষে বাড়ি বাড়ি ফেরার সময় কম দামে চপ কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারে।