• মুরারইয়ের ভাদীশ্বরে খনন, মিলছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শন
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মুরারইয়ের ভাদীশ্বরে শ্যামাপদ রায় বিদ্যাভবন লাগোয়া পুকুর পাড়ের ঢিবিতে খননকার্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শন পেল ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। গত ৫ নভেম্বর থেকে এখানে খননকার্য শুরু হয়েছে। যা আরও কিছুদিন চলবে। খননকার্যে পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন নানা মৃৎপাত্র, প্রদীপ, মাটির কেটলির মুখ ইত্যাদি। এছাড়া মাটির নীচের একাধিক স্তর পরীক্ষা করে তাঁদের ধারণা, এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মস্থান ছিল। 


    ভাদীশ্বরে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে রয়েছে উঁচু ঢিবি। বহু বছর আগে ঢিবি লাগোয়া পুকুর থেকে নানা দেবদেবীর বেশকিছু প্রাচীন মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। যেগুলি পরে মন্দিরে রেখে নিত্য পূজাচর্না শুরু হয়। সেই সময়ে এলাকাবাসী ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষেণের কাছে খনন করার আবেদন জানান। সালটা ১৯২১। অবশেষে একশো বছরেরও পরে গত ৫ নভেম্বর ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধিকর্তা রাজেন্দ্র যাদব, সহ-অধিকর্তা পিকে নায়েক, বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক সপ্তর্ষি চৌধুরী, নবীন প্রত্ন গবেষক সর্বেশ্বর রবিদাস ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক অনির্বাণজ্যোতি সিংহর উপস্থিতিতে খননকার্য শুরু হয়। তাতেই একাধিক প্রাচীন মৃৎপাত্র, মাটির প্রদীপ, কেটলির মুখ উঠে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন লেয়ার দেখে তাঁদের ধারণা, এই এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মস্থানের অস্তিত্ব ছিল। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তথা মুরারই কবি নজরুল কলেজের অধ্যাপক অনির্বাণজ্যোতি সিংহ বলেন, উদ্ধার হওয়ায় সামগ্রীগুলি বহু প্রাচীন, যা পাল যুগের। তিনি বলেন, শুধু ভাদীশ্বর নয়, এর আগে নলহাটি বারা, পাইকর ও মিত্রপুরে কিছু প্রাচীন মৃর্তি উদ্ধার হয়েছিল। যার মধ্যে কিছু বৈদ্ধ মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে। ফলে বোঝা যায় একটা সময়ে, বিশেষ করে পাল যুগে এই এলাকাজুড়ে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছিল। 


    উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুতে মুরারই ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর গ্রামের কাছে বাঁশলৈ নদী থেকে কয়েকশো সোনার মুদ্রা উদ্ধার হয়। গত ১৭ নভেম্বর অক্ষত দেবী ললিতার প্রস্তরমূর্তি উদ্ধার হয়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার একটি টিম এসে জানিয়ে যায়, উদ্ধার হওয়া সোনার মুদ্রাগুলি ওড়িশার রাজাদের। আগে নদীপথে বাণিজ্য চলত। সম্ভবত নৌকাডুবির ফলে মুদ্রাগুলি নদীতে ডুবে গিয়েছিল। এছাড়া এর আগে বাঁশলৈ নদীবক্ষে একটি কুয়োর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এএসআই অনুমান করে, এখানে আদিমধ্য যুগে বসতি ছিল। এরই মধ্যে  গত মে মাসে বাঁশলৈ নদী থেকে অক্ষত দেবী ললিতার প্রস্তর মূর্তি উদ্ধার হয়। সব মিলিয়ে এর আগে এলাকায় প্রাচীন জনপথের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। 


    অনির্বাণবাবু বলেন, রিপোর্টের একশো বছরেরও পরে ভাদীশ্বরে ঢিবিতে খননকার্য শুরু হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি কমপক্ষে ৫০ বছর আগে হতো তাহলে মন্দিরগুলি গড়ে উঠত না। ফলে পুরো চিত্রটা উদ্ধার করা মুশকিল। আমরা চাই এলাকার বিধায়ক, সাংসদ যদি উদ্যাগী হয়ে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সঙ্গে কথা বলে পুরোটা খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন অস্তিত্ব উন্মোচিত এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয় তাহলে এই এলাকা পর্যটন ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, নালন্দা, পাহাড়পুর সহ বিভিন্ন জায়গায় খননকার্য হয়েছে এবং সেখানে যে ধরনের বৌদ্ধ সংস্কৃতির অস্তিত্ব পেয়েছি, এখানে তার আরও একটা নিদর্শন আমরা পেতে চলেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)